ওয়েলসের হৃদয় ভাঙল ইরান

সুপ্রভাত ডেস্ক »

দ্বিতীয়ার্ধে যেন খুঁজেই পাওয়া গেল না গ্যারেথ বেল-অ্যারন র‌্যামজিদের। ইরানের দাপুটে ফুটবলের সামনে তারা থাকলেন নিজেদের ছায়া হয়ে। প্রবল চাপ তৈরি করেও গোলের দেখা পাচ্ছিল না ইরান। হতাশার কত ধাপ পেরিয়ে একেবারে অন্তিত সময়ে খুলে গেল গোল মুখ। তিন মিনিটের মধ্যে দুবার বল জালে পাঠাল তারা। ওয়েলসকে হারিয়ে জয়ের হাসিতে মাঠ ছাড়ল কার্লোস কিরোসের দল। খবর বিডিনিউজের।

আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে শুক্রবার ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে ২-০ গোলে জিতেছে ইরান। চলতি আসরে এটি তাদের প্রথম ও এশিয়ার দেশগুলোর তৃতীয় জয়।
একটা সময়ে মনে হচ্ছিল সমতাতেই শেষ হবে ম্যাচ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ইরানের দুটি শট লাগে পোস্টে। তাদের আক্রমণগুলো কোনো না কোনোভাবে ঠেকিয়েই দিচ্ছিল ওয়েলস।

এর মধ্যে বড় ধাক্কা হয়ে আসে ৮৬তম মিনিটে গোলরক্ষক ওয়েন হেনেসির অহেতুক লাল কার্ড। তীব্র স্নায়ু চাপের শেষ কিছুটা সময় ১০ জন নিয়ে খেলতে হয় ওয়েলসের। সেই সময়েই ব্যবধান গড়ে দেন ইরানের দুই ডিফেন্ডার। যোগ করা সময়ের অষ্টম মিনিটে দলকে এগিয়ে নেন রোজবেহ চেশমি। ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রামিন রেজাইয়ান।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬-২ গোলে বড় হার দিয়ে আসর শুরু করা ইরানের খেলায় শুরু থেকেই উন্নতির ছাপ ছিল স্পষ্ট। ইংলিশদের বিপক্ষে যতটা ভঙ্গুর ছিল তাদের রক্ষণ, ওয়েলসের বিপক্ষে যেন ততটাই দৃঢ়।

প্রথম জয়ের সন্ধানে থাকা দুই দলের লড়াইয়ে প্রথম ভালো সুযোগ পায় ওয়েলস। দ্বাদশ মিনিটে কনর রবার্টসের ক্রসে কিফার মুরের শট ঠেকিয়ে দেন ইরানের গোলরক্ষক।

তিন মিনিট পর জালে বল পাঠায় ইরান। মাঝ মাঠে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত বল পাঠাতে গিয়ে ভুল পাস দিয়ে বসেন রবার্টস। সরদার আজমাউনের সঙ্গে দারুণ ছন্দে বল দেওয়া-নেওয়া করে লক্ষ্যভেদ করেন আলি গোলিজাদেহ। কিন্তু তিনিই অফসাইডে থাকায় মেলেনি গোল, তাকে পাস না দিয়ে আজমাউন নিজে শট নিলেই হয়তো ভালো করতেন।

এরপর সাবধান হয়ে যায় ওয়েলস। রক্ষণেও একটু মনোযোগ বাড়ায়। আগের ম্যাচে ৬ গোল খাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে ইরানও ছিল সাবধানী।
যোগ করা সময়ে এগিয়েও যেতে পারত তারা। আহমাদ নুরুল্লাহির দারুণ ক্রসে একটুর জন্য পা ছোঁয়াতে পারেননি আজমাউন। হাতছাড়া হয়ে যায় দারুণ একটি সুযোগ।

এই ম্যাচ দিয়ে ওয়েলসের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়লেন গ্যারেথ বেল। তবে উপলক্ষ রাঙিয়ে রাখার মতো কিছু করতে পারেননি তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধে অন্য চেহারায় দেখা যায় ইরানকে। সে সময়ে ওয়েলসের উপর চড়াও হয় কিরোসের দল। আক্রমণাত্মক ফুটবলে আসতে থাকে সুযোগ।
৫১তম মিনিটে ডি-বক্স থেকে ডানদিকের বার কাঁপায় আজমাউনের শট। কয়েক সেকেন্ড পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে গোলিজাদেহর বুলেট গতির শট ব্যর্থ হয় বাঁদিকের পোস্ট লেগে। এরপরও সুযোগ ছিল, কিন্তু আজমাউনের শট যায় গোলরক্ষক বরাবর!

৭৩তম মিনিটে আবারও গোলের সম্ভাবনা জাগায় ইরান। এবার সাইয়িদ এজাতোলাহির শট কোনোমতে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন ওয়েলস গোলরক্ষক হেনেসি।

৮৪তম মিনিটে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে অনেকটা দূরে ফাউল করে মেহদি তারেমিকে থামান হেনেসি। শুরুতে তাকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। পরে ভিএআরে দেখে সিদ্ধান্ত পাল্টে দেখান লাল কার্ড। চলতি আসরে যা প্রথম।

হেনেসির এগিয়ে আসার কিছু ছিল না। তারেমির সঙ্গে ছিলেন একজন ডিফেন্ডার। হেনেসি লাল কার্ড দেখার পর মিডফিল্ডার অ্যারন র‌্যামজিকে তুলে নিয়ে গোলরক্ষক ড্যানি ওয়ার্ডকে নামান ওয়েলস কোচ।

৮৮তম মিনিটে মেহদি তোরাবির বুলেট গতির শট বেরিয়ে যায় পোস্ট ঘেঁষে। কোনোমতে বাকি সময়টা কাটিয়ে দিতে চাইছিল ওয়েলস। এর মধ্যেই প্রতি-আক্রমণে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বুলেট গতির শটে জাল খুঁজে নেন চেশমি। দেশের হয়ে এটি কেবল তার দ্বিতীয় গোল।

সমতায় ফিরতে মরিয়া চেষ্টায় মাঝেই আরেকটি গোল হজম করে ওয়েলস। নিজে শট না নিয়ে সতীর্থদের উঠে আসার অপেক্ষায় থাকেন তারেমি। তার কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে স্কোরলাইন ২-০ করেন রেজারাইন।

এই জয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার সম্ভাবনায় এগিয়ে গেল ইরান। অন্য দিকে শঙ্কায় পড়ে গেল প্রথম দুই ম্যাচে কেবল ১ পয়েন্ট পাওয়া ওয়েলস।