চট্টগ্রাম নগর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের জ্যৈষ্ঠপুরা এলাকার ভান্ডাল জুড়ি পাহাড়ের পাদদেশে একটি প্রকল্পের পানি শোধনাগার নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান থেকে ১৩৩ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি পাঁচ বছরের কাজ। অথচ শেষ করতে সময় নিয়েছে প্রায় এক দশক। ব্যয় বেড়েছে ৯৫৮ কোটি টাকা। বাড়তি সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির পরও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গ্রাহক পাচ্ছে না সংস্থাটি। এতে বিপুল বিনিয়োগের সুফল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ করার কথা ছিল; কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হয় ওয়াসা।
এ বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তবে এর মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। অবশ্য কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই ২০২৩ সালের শুরুর দিকে আবাসিক ও শিল্পকারখানার গ্রাহকদের পানি সরবরাহে সংযোগ দেওয়ার কাজ শুরু করে ওয়াসা। এ প্রকল্পের আওতায় ১৫ হাজার গ্রাহককে সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে; কিন্তু সংযোগপ্রক্রিয়া শুরু করার আড়াই বছরে গ্রাহক পেয়েছে তিন হাজার, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০ শতাংশ। এর মধ্যে সংযোগ নিয়েছে এমন শিল্পকারখানার সংখ্যা মাত্র একটি।
স্থানীয় মানুষ কেন ওয়াসার পানির সংযোগ নিচ্ছে না, তার কারণ উঠে এসেছে সংস্থাটির ২০২৩ সালে করা এক জরিপে। জরিপে বলা হয়, উপজেলার বাসিন্দারা টাকার বিনিময়ে পানির সংযোগ নিতে আগ্রহী নন। কারণ, তাঁরা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেওয়া গ্রামীণ গভীর নলকূপের পানি বিনা মূল্যে ব্যবহার করে থাকেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও শিল্পকারখানাগুলো পানির সংযোগ দিতে না পারার দায় নিচ্ছে না ওয়াসা; বরং গ্রাহকদের ওপর দায় চাপাচ্ছে। ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পানির সংযোগ কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করে না। আমরা পানি দিতে প্রস্তুত অথচ ওরা (শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক গ্রাহক) পানি নিচ্ছে না। গড়িমসি করছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, পটিয়া ও বোয়ালখালীতে স্থাপিত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভূগর্ভস্থ পানি তুলছে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।’
প্রকল্প বাস্তবায়নে মানুষের চাহিদা ও ওয়াসার পরিকল্পনায় ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান। তিনি বলেন, এত বড় প্রকল্প নেওয়ার আগে যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই করার প্রয়োজন ছিল। কাজ শেষ হওয়ার পরেও গ্রাহক না পাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। এখন উপজেলায় গ্রাহক না পেলে উৎপাদিত পানি শহরে দেওয়ার ব্যবস্থা করার বিকল্প চিন্তা করতে হবে।
হয়ত একসময়ে এসব এলাকায় পানি সরবরাহ করতে হবে ওয়াসাকেই। সংস্থাটি আগেভাগে ব্যয়বহুল প্রকল্পটি হাতে নিয়ে ফেলেছে। কিন্তু পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজটি সঠিকভাবে করা হয়নি। কোনো কারণে কারো অতি উৎসাহ ছিল। হয়ত ব্যক্তিগত লাভালাভের বিষয়ও জড়িত থাকতে পারে। কারণ ওয়াসা সে সময় এমবকি এখনও নগরবাসীর পানির পূর্ণ চাহিদা মেটাতে পারছে না।