বিপদ মানুষকে এক করে তা আরেকবার প্রমাণিত হলো চলমান ভয়াবহ বন্যায়। স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যায় ফেনী ডুবে গেলে সারাদেশের মানুষ যে যেভাবে পারছে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কিছু না কিছু করছে। এরমধ্যে উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে মৃত্যুর খবরও প্রকাশিত হয়েছে। তবুও দমে যাচ্ছে না মানুষ। ঝুঁকি নিয়েই নেমে পড়ছে উদ্ধারকাজে।
গত বুধবার থেকে আট জেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার আরও চার জেলাসহ মোট ১২ জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। জেলাগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। বন্যার্তদের সহায়তায় পাঁচ জেলায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য বিতরণ করছেন সেনাসদস্যরা।
আকস্মিক বন্যায় বড় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে ফেনীতে। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার পর ফেনী পৌর শহরও গতকাল পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, কোথাও বুকসমান পানি। আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশে টানা বৃষ্টি হয়েছে এবার। ১৬ আগস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছিল। আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব জানান, আগামীকাল শনিবার নাগাদ বৃষ্টি একটু কমতে পারে।
ফেনী সদরের বিভিন্ন এলাকা কার্যত পানির নিচে। গতকাল দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দেখা যায়, কোথাও বুকপানি, কোথাও গলাপানি। দক্ষিণ মাইজবাড়িয়া, হাফেজিয়া মাদ্রাসা, ভাঙ্গা তাকিয়াসহ একাধিক গ্রামে এ দৃশ্য দেখা যায়। গ্রামের পর গ্রামের বেশির ভাগ একতলা ঘর তলিয়ে গেছে। ফসলি জমি, পুকুর, রাস্তাঘাট ডুবে আছে। টানা বর্ষণের ফলে নোয়াখালীর আটটি উপজেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ডুবে গেছে ফেনী-নোয়াখালী সড়কের চৌমুহনী–মাইজদী অংশের একাধিক এলাকা। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘরবাড়ি ছেড়ে ছুটে চলছে অনেকে।
রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের অনেক স্থানে পানি। ওই সড়কে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে পড়েছে। এতে কার্যত ওই সব এলাকার মানুষ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
এরমধ্যে সুখবর মিলেছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি ধীরগতিতে হ্রাস পাচ্ছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের ত্রিপুরার অভ্যন্তরীণ অববাহিকায় ভারী বৃষ্টিপাত দেখা যায়নি। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র। শুক্রবার সকাল ৯টায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান স্বাক্ষরিত নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে এ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি ধীরগতিতে হ্রাস পাচ্ছে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাসমূহে ভারী বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানির সমতল হ্রাস পাওয়া শুরু হয়েছে। ফলে বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য তুলে ধরে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় এ অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী, হালদা ইত্যাদি নদীসমূহের সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এই সময়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানেও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদ-নদীসমূহের সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।