চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত বরকল ও কালারপোল সেতু উদ্বোধন হবে এ মাসেই। ইতোমধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি মাসের শেষের দিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় নির্মিত সারাদেশের ১০১টি সেতু উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এসব সেতুর নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। কোথাও কোথাও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
এ ১০১টি সেতুর মধ্যে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪৫টি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার দোহাজারী সড়ক বিভাগের অধীন বরকল ও কালারপোল সেতু, বান্দরবানের টংকাবতী সেতু এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ৪২টি সেতু রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলার দোহাজারী সড়ক বিভাগের অধীন সেতু দুটির শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম-১ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. আবু নাছের মনিটরিং টিমের নেতৃত্ব দেন। টিমের অন্য সদস্যগণ হলেন মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মো. দেলোয়ার হোসেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার।
মনিটরিং টিম প্রথমে কর্ণফুলী উপজেলার কালারপোল ওহিদিয়া সেতু পরিদর্শন করেন। প্রায় ১৮০.৩৭৩ মিটার দীর্ঘ ও ১০.২৫ মিটার প্রস্থের এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এর উভয় পাশে ৫৫০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৪.৭৩ কোটি টাকা। সেতুটি পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে।
মহাসড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার স্বার্থে এবং জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন ও নিরাপদ মহাসড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। মইজ্জারটেক-বোয়ালখালী-কানুনগোপাড়া-উদরবন্যা জেলা সহাসড়কের মধ্যে কর্ণফুলী খালের উপর এ সেতুটির অবস্থান। এ সড়কে শিকলবাহা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেতুটির পূর্বাংশ কর্ণফুলী টানেলে সংযোগ সড়কের সাথে এবং পশ্চিমাংশ মইজ্জারটেক হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর সাথে সংযুক্ত হওয়ায় এটি জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ইতিবাচক অবদান রাখবে। একই সাথে যাতায়াতের সুবিধাসহ জনসাধারণের সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে।
পরিদর্শন টিম পরবর্তীতে গাছবাড়িয়া-চন্দনাইশ-বরকল-আনোয়ারা সড়কের চাঁদখালী নদীর উপর নির্মিত বরকল সেতু পরিদর্শন করেন। এ সেতুটিরও সব কাজ শেষ হয়েছে। অপেক্ষা শুধু উদ্বোধনের। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৩.৯৯ কোটি টাকা যা সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের তহবিল হতে যোগান দেওয়া হয়েছে। এটি ১১৭.৩১ মিটার দৈর্ঘ্যরে ও ১০.২৫ মিটার প্রস্থের পিসি গার্ডার সেতু। সেতুর উভয় পাশে ৭৭০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৩.৭৯ কোটি টাকা। এছাড়া এ সেতুর দু’পাশে ২০০ মিটার রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে যাতে ব্যয় হয়েছে ২.০১ কোটি টাকা।
দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি নির্মাণের পূর্বে এখানে জরাজীর্ণ বেইলি সেতু ছিল। যাতায়াত ব্যবস্থা ছিলো অত্যন্ত কষ্টকর। তাই যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুটির পশ্চিমাংশ পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী-টইটং আঞ্চলিক মহাসড়কের সাথে এবং পূর্বাংশ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত হওয়ায় এটি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এর ফলে বান্দরবান জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নততর হবে। চন্দনাইশ ও আনোয়ারা উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। একই সাথে সময় ও অর্থেও সাশ্রয় হবে। বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে টানেলগামী কিছু পরিবহন বরকল সেতু ব্যবহার করে গাছবাড়িয়া-আনোয়ারা সড়কে চলাচল করবে।
মনোরম এ সেতুকে ঘিরে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। কেননা এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সন্নিহিত এলাকার দুর্ঘটনা হ্রাস, যানজট নিরসন ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক নেটওয়ার্ক স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ায় এলাকার জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এটি এনেছে নতুন মাত্রা।
দোহাজারী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি