বিশ্লেষণ
গণিতে গত বছর পাশ করেছিল ৮৬ দশমিক
৪৩ শতাংশ, এবার ৯৫ দশমিক ১৫ শতাংশ
ভূঁইয়া নজরুল <
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে গত বছর এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে গণিতে পাশের হার ছিল ৮৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ, এবছর এবিষয়ে পাশের হার ৯৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। প্রায় ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে একটি বিষয়ে পাশের হার। কিন’ অন্যান্য বিষয়গুলোতে পাশের হারে এক বা দুই শতাংশের বেশি পার্থক্য হয়নি। তাহলে কি এমন ঘটনা ঘটলো যে গণিতে ৯ শতাংশ পাশের হার বাড়লো?
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের গত কয়েক বছরের বিষয়ভিত্তিক পাশের হার বিশেস্নষণ করে একক কোনো বিষয়ে এতো পরিবর্তন চোখে পড়েনি। তবে গণিত ও ইংরেজি উভয় বিষয়ে পাশের হার কমে গেলে বোর্ডের পাশের হার কমে যাওয়া কিংবা বেড়ে যাওয়া ছিল সাধারণ ঘটনা।
ইংরেজি ও গণিতের পাশের হার ফলাফলে ফ্যাক্টর তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এবছর ইংরেজি প্রথমপত্রে পাশের হার ছিল ৯৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ ও দ্বিতীয় পত্রে ৯৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। অপরদিকে গতবছর ইংরেজি প্রথমপত্রে পাশের হার ছিল ৯৮ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ও দ্বিতীয়পত্রে ৮৯ দশমিক ৭০ শতাংশ। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ফলাফলের সাথে এই দুই বিষয়ের সংযুক্ত রয়েছে বলে একমত পোষণ করেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ। তিনি বলেন,‘সরকার গত কয়েক বছর ধরে গণিত ও ইংরেজিতে ভাল ফলাফলের জন্য শিক্ষকদের চাপ দিচ্ছে এবং কিভাবে ফলাফল ভাল করা যায় সেই কৌশল নির্ধারণ করে কাজ করছে। আর এর সুফলই এবার পাওয়া গেলো এসএসসির ফলাফলে।’
গত বছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে সামগ্রিক পাশের হার ছিল ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ এবার তা বেড়ে হয়েছে ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপরদিকে গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৭ হাজার ৩৯৩ জন এবার পেয়েছে ৯ হাজার ৮ জন। এই ৯ হাজার ৮ জনের বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা পেয়েছে ৮ হাজার ৯৯টি, মানবিকের শিক্ষার্থীরা পেয়েছে ৬০টি ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা পেয়েছে ৮৪৯টি। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির বিচারে বলা যায় বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছরের মতো এবারো বেশি জিপিএ-৫ পাবে এটাই স্বাভাবিক। তারপরও বেশি জিপিএ-৫ প্রাপ্তি প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে শতভাগ পাশের হারে শীর্ষ প্রতিষ্ঠান নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদুল আলম বলেন, এখন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সকলে সচেতন। এই সচেতনতার প্রভাব পড়ছে ফলাফলে। এছাড়া গত বছর পাশের হার কম থাকায় এবার একটু জোর দেয়া হয়েছে। এতেই হয়তো পাশের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে।
এদিকে গণিত বিষয়ের একাধিক প্রধান পরীক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার গণিত প্রশ্নপত্রে তিনটি ভুল ছিল। তিনটি প্রশ্নে ১২ নম্বর ভুল ছিল। এই ভুল প্রশ্নগুলো যারা করার চেষ্টা করবে তারা পুরো নম্বর পেয়েছে। হয়তো প্রশ্নপত্র সঠিক হলে এখানে অনেক শিক্ষার্থী পুরো নম্বর পেত না, এখন ভুল প্রশ্নপত্র হওয়ায় করার চেষ্টা করাতেই পুরো নম্বর পেয়েছে। এতেই হয়তো গণিতে পাশের হার বেড়েছে এবং এর প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। এবিষয়ে কথা হয় সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও গণিতের প্রধান পরীক্ষক এ এইচ এম আবুল হোসাইনের সাথে। তিনি বলেন,‘ বিধিমালা অনুযায়ী ভুল প্রশ্নোত্তর করার চেষ্টা করা হলে শিক্ষার্থীরা অবশ্যই নম্বর পাবে। তবে গত কয়েকবছর ধরে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় এবং শিক্ষার্থীরা গণিতের একটি অংশ করলেও নম্বর পাচ্ছে। ভুল হলেই শূন্য পাওয়ার দিন এখন আর নেই।’
তাহলে কি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে শিথিলতার কথা বলা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিভিন্ন পরীক্ষক জানান, উত্তরপত্রে কিছু লিখলেই যাতে নম্বর দেয়া হয় তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সেহিসেবে শিক্ষার্থীরা উত্তরের কাছাকাছি লিখলেই কমবেশি নম্বর পেয়েছে এবং পাশের হার বেড়েছে।
পরীক্ষকদের প্রতি নির্দেশনা বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ বলেন,‘ শিক্ষকরা যাতে উত্তরপত্র সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেন সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।‘
গণিতের প্রশ্নপত্রের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘গণিতে একটি প্রশ্নে ভুল হয়েছিল, সেজন্য এই প্রশ্ন যারা করার চেষ্টা করবে তাদের নম্বর দিয়ে দিতে বলা হয়েছে। তবে ভুল প্রশ্নের নম্বর ৪ এর বেশি হবে না।’
এবছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এক হাজার ৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৪৪ হাজার ৯৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮২৩ জন পরীক্ষার্থী উপস্থিত হয়ে পাশ করেছে ১ লাখ ২১ হাজার ৮৮৮ জন। পাশের হারে যা ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ। গত বছর পাশের হার ছিল ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ। এর আগে ২০১৫ সালে ৮২ দশমিক ৭৭ শতাংশ পাশের হার থেকে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পাশের হার ২০১৬ সালে ৯০ দশমিক ৪৪ শতাংশে পৌছেছিল। সেবার ২০১৫ সালে গণিতে পাশের হার ছিল ৮৯ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে গণিতে পাশ করেছিল ৯৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।