এসএসসির ফলাফল : গণিত ও ইংরেজিতে নজর দিতে হবে

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় তা ১৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমেছে। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। জিপিএ ৫-প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে এবার। দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, আগের মতো ইংরেজি ও গণিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক ফলাফলে।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়। শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের ফল প্রকাশ করেছে আলাদাভাবে। এবার পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখের মতো। পাস করেছে ১৩ লাখ এবং অকৃতকার্য হয়েছে ছয় লাখ। জিপিএ ৫-এর সংখ্যাও কমেছে, ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। আগের বছর জিপিএ ৫ পেয়েছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন।
বিষয়ভিত্তিক ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছরও শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে গণিত ও ইরেজিতে। এর মধ্যে গণিতে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ, আর ইংরেজিতে ৮৭ দশমিক ২১ শতাংশ। এছাড়া বাংলায় ৯৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, পদার্থবিজ্ঞানে ৯৪ দশমিক শূন্য ২, রসায়নে ৯৪ দশমিক ৭৬, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ৯৭ দশমিক ২৯, পৌরনীতিতে ৯৪ ও হিসাববিজ্ঞানে ৯১ দশমিক ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। আবার গণিত ও ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশি খারাপ করেছে বরিশাল বোর্ডের পরীক্ষার্থীরা। এ বোর্ডে ৩৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ গণিতে ও ৩০ দশমিক ৩৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী ইংরেজিতে অকৃতকার্য হয়েছে।

বাংলাদেশ শিক্ষা-তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ পরিসংখ্যানেও একটি হতাশাজনক চিত্র উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি ও গণিত শিক্ষকদের প্রায় ৮৫ শতাংশেরই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেই। ২০২৩ সালে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী প্রকাশিত এ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে মাধ্যমিক স্কুলগুলোয় মোট ইংরেজি শিক্ষকের সংখ্যা ৬০ হাজার ৮৫৭ জন। তাদের মধ্যে ইংরেজিতে স্নাতক (অনার্স) ডিগ্রিধারীর সংখ্যা ৪ হাজার ১৫৮, যা মোট শিক্ষকের ৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী শিক্ষক ৫ হাজার ২১৮, যা মোট শিক্ষকের ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। সে অনুযায়ী ইংরেজির শিক্ষকদের ৯ হাজার ৩৭৬ জন বা ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ বিষয়ভিত্তিক স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনধারী। আর ইংরেজি বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর নেই ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশের।
বর্তমানে যারা ইংরেজি পড়াচ্ছেন তাদের মধ্যে বড় অংশই অন্য বিষয়ে ডিগ্রিধারী। আর ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ বা ৩ হাজার ১৪৭ জন শিক্ষক স্নাতকই করেননি, এইচএসসি পাস।
গণিতেও প্রায় একই চিত্র উঠে আসে ব্যানবেইসের প্রতিবেদনে। মাধ্যমিক স্কুলগুলোয় মোট গণিত শিক্ষকের সংখ্যা ৬৪ হাজার ১৪৭। তাদের মধ্যে গণিতে স্নাতক (অনার্স) ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা ৩ হাজার ৮৩৬, যা মোট শিক্ষকের ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আছেন ৪ হাজার ৬৪৩ জন, যা মোট শিক্ষকের ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। সে অনুযায়ী গণিতের শিক্ষকদের মধ্যে বিষয়টিতে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আছেন মাত্র ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। অর্থাৎ গণিতে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ছাড়াই শিক্ষার্থীদের বিষয়টি শেখাচ্ছেন ৮৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষক।

ইংরেজি ও গণিতে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা প্রসঙ্গে এক শিক্ষাবিদ বলেন, ‘আমাদের দেশে ইংরেজি ও গণিতে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর একটি বড় কারণ দক্ষ শিক্ষকের সংকট। তাই সরকারের উচিত হবে ফল বিশ্লেষণের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া। বিশেষত যারা তুলনামূলক বেশি পিছিয়ে আছে তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেয়া।’
আমরাও মনে করি ইংরেজি ও গণিতে শিক্ষক বাড়াতে হবে। আর বর্তমান শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। এটা বিষ্ময়কর যে, শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের সুবিধা থাকলেও আমাদের দেশে ইংরেজি শিক্ষায় এখনও অনেক পিছিয়ে। এ সংকট দূর করার যাবতীয় প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে।