নিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া »
পেকুয়ার মগনামা আদর্শ শিক্ষা নিকেতন থেকে ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ জন। রেজিস্ট্রেশন ও ফরম ফিলআপ সবকিছু হয়েছে। প্রস্তুতিও নিয়েছে সবাই কিন্তু পরীক্ষার একদিন আগে স্কুলে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জানতে পারে তাদের প্রবেশপত্র আসেনি।
কারণ খুঁজতে গিয়ে তারা জানল- প্রধান শিক্ষক তাদের ফরম ফিলআপের সব টাকা নিলেও ফরম ফিলআপই করেননি।
পরবর্তীতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীরা আরো জানতে পারে তাদের ৯ম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনই করেননি ওই শিক্ষক।
এই কাজটি করেছেন মগনামা আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক মাসুদ বিন আবদুল জলিল।
হতভাগা ১৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬ জন ছাত্র ও ১৩ জন ছাত্রী। সবাই মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী।
উল্লেখ্য, মানবিক বিভাগের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার থেকে।
জানা যায়, স্কুলটি নিবন্ধিত না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠদান করা হয় এবং নিবন্ধিত একটি স্কুলের নামে রেজিস্ট্রেশন, ফরম ফিলআপ করে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে।
পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থী মো. রাকিব জানান, ‘আমরা বিগত কয়েকদিন ধরে প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করছিলাম যে আমাদের এডমিট কার্ড এসেছে কি না। তিনি বলেন- আসবে, তোমরা পড়ালেখা কর। এডমিট নিয়ে চিন্তা করিও না, কিন্তু গতকাল (রোববার) যখন স্কুলে গেলাম তখন তিনি আমাদেরকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখে বাড়িতে চলে যেতে বলেন। যখন আজকে (সোমবার) দেখা করলাম তখন বললেন তোমরা পরিস্থিতির শিকার, তোমরা ২০২২ সালের এপ্রিলে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।’
এ বিষয়ে জানতে মগনামা আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক মাসুদ বিন আবদুল জলিলের মোবাইল নম্বরে ফোন করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে পেকুয়া উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজার উলফাত জাহান বলেন, ‘মগনামা আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের ১৯ শিক্ষার্থী এসে তাদের এডমিট না পাওয়ার বিষয়টি জানালে আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, তাদের ফরম ফিলআপ তো দূরের কথা ৯ম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন পর্যন্ত হয়নি। তাদের শুধু ২ বছর ধরে ক্লাস নেওয়া হয়েছে। এই ১৯ শিক্ষার্থীর জীবন থেকে ২টি বছর হারিয়ে যাবে। স্কুলটি অনিবন্ধিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই, তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহায়তায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন বলে জানতে পেরেছি।’
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার পূর্বিতা চাকমা বলেন, ‘মগনামা আদর্শ শিক্ষা নিকেতনের ওই শিক্ষকের কারণে ১৯ জন শিক্ষার্থীর জীবন থেকে ২টি বছর নষ্ট হয়ে গেল। তিনি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘একজন অভিভাবকের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মামলা রুজু করা হয়েছে। আমরা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ওই শিক্ষককে আইনের আওতায় আনব।’