‘জীবিত’ আসামিকে ‘মৃত’ দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট
নিজস্ব প্রতিবেদক :
‘জীবিত’ আসামিকে ‘মৃত’ দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়ার সেই চাঞ্চল্যকর ঘটনার কিনারা করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ সংক্রান্তে গঠিত সিএমপির তদন্ত কমিটি ‘গাফিলতির’ প্রমাণ পেয়েছে বলে জানা গেছে। তদন্ত কমিটির প্রধান নগর ডিবির উপকমিশনার (উত্তর) আলী হোসেন বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতিতে এ ভুল হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার মামলা আর চার্জশিট দেওয়া মামলা আলাদা। ‘জীবিত’ ও ‘মৃত’ দুই আসামির নামে মিল থাকলেও তাদের বাবার নাম ও ঠিকানা ভিন্ন।’
এ ঘটনায় ইতিপূর্বে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ বোস্তামি থানার এসআই দীপঙ্কর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে কমিটি। গতকাল সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশের দাবি, ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে আমিন জুট এলাকার খেলার মাঠে জয়নাল আবেদিন নামে এক কিশোরকে গ্রেফতারের পর তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গেলে তার সহযোগী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জয়নালকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় যে জয়নাল নিহত হন, তিনি সেই মামলার আসামি নন। প্রকৃত আসামি জয়নাল এখনও জীবিত এবং আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। অথচ মামলার আসামি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে বলে অব্যাহতির সুপারিশ করে গত বছর ১৫ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট দেন তদন্ত কর্মকর্তা বায়েজিদ বোস্তামি থানার এসআই দীপঙ্কর চন্দ্র রায়। বিষয়টি নজরে আসার পর মামলার বাদি এবং তার পক্ষের আইনজীবী ‘জীবিত’ আসামিকে চার্জশিটে অর্ন্তভুক্ত করতে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করেন। ‘জীবিত’ আসামিকে ‘মৃত‘ দেখিয়ে আদালতে অব্যাহতির সুপারিশ করে চার্জশিট দেয়ার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এদিকে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত মো. জয়নাল আবেদিনের পরিবারও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে আসছেন।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে তাকে মারধরের অভিযোগ করেন নগরের রৌফাবাদ এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম। অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালত বায়েজিদ থানাকে তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। এ মামলায় নিকট আত্মীয় মো. নাসিমসহ সাতজনকে আসামি করেন শাহ আলম। ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর আদালতে চার্জশিট জমা দেন এসআই দীপঙ্কর চন্দ্র রায়। মামলায় ৬জনকে অভিযুক্ত করে দ্বিতীয় আসামি জয়নালকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেন তিনি। ওই চার্জশিটে তিনি লেখেন, মো. জয়নাল (১৯), পিতা-আবদুল জলিল পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
জানা গেছে, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত জয়নাল আবেদিন নগরের আমিন জুট মিল খেলার মাঠের পাশে টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট নামে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৮ সালে পাশ করে দশম শ্রেণিতে আর ভর্তি হয়নি।
‘বন্দুকযুদ্ধের‘ নামে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করে জয়নালের বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার নিরপরাধ ছেলেকে পুলিশ বাসা থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।’