নিজস্ব প্রতিবেদক »
পবিত্র রমজান মাসের সংযম শেষে উদযাপিত হতে যাচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে আনন্দের উৎসব ঈদুল ফিতর। সকল বৈষম্য ভুলে এ দিনে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলেই ঈদ আনন্দ উদযাপন করেন। আজ শুক্রবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল শনিবার সারা দেশ উদযাপিত হবে ঈদুল ফিতর। অন্যথা রোজা ৩০টি পূর্ণ হবে এবং ঈদ হবে পরদিন রোববার।
পবিত্র রমজানে রোজা রেখে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য মুসলমানগণ নির্ধারিত সময় পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকেন। এ সময় যেকোনো অন্যায়-অবিচার-পাপকর্ম থেকেও তারা বিরত থাকেন। সাত তোলা পরিমাণ স্বর্ণ বা তৎ পরিমাণ সম্পদের অধিকারী লোকেরা এ মাসে যাকাত আদায় করেন। এ ছাড়া ইবাদত বন্দেগিতে কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি হয়ে থাকলে মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী নির্ধারিত হারে সদকাতুল ফিতর আদায় করে থাকেন।
ঈদের দিন সকালে গোসল করে ওযূ করে পাক পবিত্র হয়ে সুগন্ধি আতর লাগিয়ে নতুন জামা কাপড় পরিধান করে মুসলমানরা মসজিদে বা ঈদগাহে ঈদের সালাত আদায় করে থাকেন।
ঈদের নামাজে বিশ্বের সকল মানুষের সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে রাব্বুল আলামীনের কাছে প্রার্থনা করা হয়। নামাজ শেষে মুসল্লিরা অতীতের সকল মান-অভিমান, হিংসা, ঘৃণা, বিভেদ বিভ্রান্তি ভুলে হাসিমুখে করমর্দন ও এবং বুকে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করেন। এদিকে গৃহিণীরা নানান পদের মিষ্টান্নসহ মুখরোচক খাবারের আয়োজন করে থাকেন। নামাজ শেষে সকলে একে অপরের বাড়িতে মেহমান হন, কুশল বিনিময় করেন। এদিনে ছোটরা বড়দের সালাম-কদমবুছি করে এবং বড়রা তাদের ঈদ সালামি দিয়ে থাকেন। এভাবে একত্রে আনন্দে ধর্মীয় এই সাম্যের উৎসব পালন করেন বিশ্বের মুসলমানরা।
আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে, প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করতে অধিকাংশ মানুষ ইতোমধ্যে নগর ছেড়ে গেছেন। রোজকার ব্যস্ত নগরী হয়ে পড়ছে ফাঁকা। যারা এখনও গ্রামের উদ্দেশে নগর ছাড়েননি অথবা নগরেই ঈদ করবেন তারা শেষ মুহূর্তে সেরে নিচ্ছেন প্রয়োজনীয় কেনাকাটা।
গত দিনগুলোতে বেচাকেনায় তেমন গতি না থাকলেও এখন ব্যস্ত সময় কাটছে বিক্রেতাদের। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে গণপরিবহনগুলো গুনছে বাড়তি ভাড়া। নগরের রিকশা, সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহনে আদায় করছে বেশি ভাড়া।
শেষ মুহূর্তে সুপারশপসহ মুদির দোকানগুলোতে ক্রেতারা ভিড় করছেন। পার্কসহ বিভিন্ন পযর্টন কেন্দ্রে দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এবারও ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে প্রথম ও প্রধান জামাত সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে।
চসিক সূত্রে জানা যায়, প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব হযরতুল আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী এবং দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন জমিয়াতুল ফালাহ’র পেশ ইমাম হাফেজ মওলানা আহমদুল হক।
নগরে চসিকের তত্ত্বাবধানে সকাল ৮টায় সুগন্ধা আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, হযরত শেখ ফরিদ (র.) চশমা ঈদগাহ মসজিদ, চকবাজার সিটি করপোরেশন জামে মসজিদ, জহুর হকার্স মার্কেট জামে মসজিদ, দক্ষিণ খুলশী (ভিআইপি) আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, আরেফীন নগর কেন্দ্রীয় কবরস্থান জামে মসজিদ, সাগরিকা গরুর বাজার জামে মসজিদ ও মা আয়েশা সিদ্দিকী চসিক জামে মসজিদে (সাগরিকা জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন) ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে সংশ্লিষ্ট ওর্য়াড কাউন্সিলরদের তত্ত্বাবধানে ১টি করে প্রধান ঈদ জামাত নিজ নিজ এলাকার মসজিদ ও ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে।
অপরদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির ব্যবস্থাপনায় প্রধান ঈদ জামাত স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আল্লামা ড. সাইয়েদ আবু নোমান।