নিজাম সিদ্দিকী »
দুপুর ১২টা। হঠাৎই দেখা গেলো, ফ্লাইওভারের পাশ দিয়ে গড়ে ওঠা লোহার পাতের তৈরি অপেক্ষাকৃত সরু উড়াল পথ ধরে ধীর গতিতে ছুটে যাচ্ছে একটি মাইক্রো। আর সেই পথের দু’পাশে পত পত করে উড়ছে ছোটো ছোটো ছড়ির মাথায় লাগানো ম্যাক্স-র্যাঙ্কিনের (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান) আয়তকার ব্যানারগুলো।
এটি ছিলো গতকাল সোমবার নগরীর মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট থেকে টাইগার পাস পর্যন্ত অংশে নির্মিত র্যাম্পে সিডিএর পরীক্ষামূলক যান চলাচলের দৃশ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ১৪ নভেম্বর ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করছেন নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
কিন্তু এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ১৫টি র্যাম্পের মধ্যে শুধু পতেঙ্গা ও টাইগারপাস র্যাম্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। সেই হিসেবে পতেঙ্গা থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। বাকি রয়েছে লালখানবাজার থেকে ওয়াসা পর্যন্ত সড়কের কাজ। এ অবস্থায় উদ্বোধনের পর পরই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চলাচলের জন্যে খুলে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে সিডিএ সূত্রে জানা গেছে।
আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এটি পুরোপরি চলাচলের জন্যে খুলে দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা দেওয়ানহাট থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত র্যাম্প নামানোর কাজ শেষ করেছি। এখন পতেঙ্গা থেকে উঠে টাইগারপাস এসে নামা যাবে। কিন্তু এরপরও সড়কের কিছু কাজ বাকি থাকায় এখনি তা চলাচলের জন্যে খুলে দেয়া যাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর আমরা বাকি র্যাম্পের কাজগুলো শুরু করবো। এছাড়া টাইগারপাস থেকে ওয়াসা পর্যন্ত গার্ডারের কাজ শেষ হলে এটি আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সঙ্গে মিলিত হবে। এতে মাস দু’য়েকের মতো সময় লাগবে। এর মধ্যে টোল আদায়ের জন্যে টোল প্লাজা নির্মাণ করা হবে। সব মিলিয়ে আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ নাগাদ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে ফেব্রুয়ারি থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চলাচলের জন্যে পুরোপুরি চালু করে দেওয়া সম্ভব হবে।’
কাজের অগ্রগতি বিষয়ে বলেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দুটি ভাগে ভাগ করেছি। এর একটি হলো র্যাম্পের অংশ এবং অপরটি মূল ফ্লাইওভারের কাজ। ইতিমধ্যে ফ্লাইওভারের কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলা যায়। ফ্লাইওভারের মূল দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১৫ দশমিক দুই কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৪ কিলোমিটারের মতো কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে।’
সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ হলে নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে মাত্র কুড়ি মিনিট। এ সড়কে নির্দিষ্ট অংকের টোল পরিশোধ করে চলাচল করতে হবে।
টোলের পরিমাণ কী হবে
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এখনো টোলের পরিমাণ নির্ধারিত হয়নি, হলে তা সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে।’
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটির নাম রাখা হয়েছে ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণের প্রস্তাব করে সিডিএ কর্তৃপক্ষ। গত ২৪ আগস্ট সিডিএ ভবনে আয়োজিত ৪৫৮তম বোর্ড সভায় এ প্রস্তাব করা হয়।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প
সিডিএ সূত্র জানায়, নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে এ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এতে সময় বেড়েছে এক বছর। প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা করা হয়। সিডিএ’র এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র্যাঙ্কিন।