চসিক নির্বাচনের কারণে বিএনপি নেতাদের আপত্তি #
সালাহ উদ্দিন সায়েম :
চট্টগ্রাম নগর ছাত্রদলের ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ দফা কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু ১১ দফায় নতুন কমিটি গঠনের এ উদ্যোগও ভেস্তে যাচ্ছে।
গত ৯ জুলাই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির নেতাদের সাথে ভার্চুয়াল সভা করেন। সভায় ২০০০ সালের পর এসএসসি পাশ ও অবিবাহিত ছাত্রদের নিয়ে মহানগরের ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এ লক্ষ্যে গেল শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনে সদস্য ফরম বিতরণ করেছে নগর ছাত্রদল।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতৃবৃন্দ চায় না নগর ছাত্রদলের কমিটি হোক। চট্টগ্রামের বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের আপত্তির কারণে নগর ছাত্রদলের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া এবারও ঝুলে যাচ্ছে।
দলীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, নগর বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা ও কেন্দ্রীয় পদে থাকা চট্টগ্রামের এক শীর্ষ নেতা দলের উচ্চ পর্যায়ে চসিক নির্বাচনের আগে নগর ছাত্রদলের কমিটি গঠনের বিষয়ে জোরালোভাবে আপত্তি জানিয়েছেন। বিএনপির হাইকমান্ড তাদেরকে চসিক নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামে ছাত্রদলের কমিটি না দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের কয়েকজন শীর্ষ বিএনপি নেতা দলের উচ্চ পর্যায়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেছেন। চট্টগ্রামে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের বিষয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অবহিত না করায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি ও মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন সুপ্রভাতকে বলেন, নগর ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সে ব্যাপারে অভিভাবক সংগঠনের সভাপতি হিসেবে আমিসহ অন্য নেতৃবৃন্দ কেউ কিছু জানি না। অথচ অভিভাবক সংগঠন হিসেবে আমাদেরকে এ বিষয়ে জানানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তারা সেটা করেনি।
তিনি বলেন, একদিকে করোনা সঙ্কট অন্যদিকে সামনে মেয়র ইলেকশন আসছে, এ অবস্থায় নগর ছাত্রদলের কমিটি গঠন না হলেই দলের জন্য ভালো হবে। আমীর খসরু, আবদুল্লাহ আল নোমানসহ চট্টগ্রামের বিএনপির সকল শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে একমত। এর কারণ হলো, কমিটি গঠনের পর পদবঞ্চিত নেতারা আন্দোলন-সংগ্রাম করবে। তাদের এই প্রতিক্রিয়া অভিভাবক সংগঠন হিসেবে আমাদের কাঁধে আসবে। নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে।
বিএনপির হাইকমান্ড না চাইলে চসিক নির্বাচনের আগে চট্টগ্রাম মহানগরের কমিটি গঠন করা হবে না বলে জানিয়েছেন ছাত্রদলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান ও কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি কাজী রওনকুল হক শ্রাবণ।
সুপ্রভাতকে তিনি বলেন, বিএনপি যেহেতু আমাদের অভিভাবক সংগঠন তাই তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সদস্য ফরম সংগ্রহ করার পর এগুলো যাচাই-বাছাই করতে হবে। যদিও আমরা কোরবানের আগে চট্টগ্রাম নগরের আহ্বায়ক কমিটি দেওয়ার চিন্তা করেছি। কিন্তু কোনো কারণে দেওয়া না গেলে আমরা কমিটির সেটআপ প্রস্তুত করে রাখবো। পরে সময়মতো ঘোষণা করবো।
২০১৩ সালের ১১ জুলাই গাজী মো.সিরাজ উল্লাহকে সভাপতি ও বেলায়েত হোসেন বুলুকে সাধারণ সম্পাদক করে নগর ছাত্রদলের ১১ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন হয়। এর মধ্য কমিটির এক সহসভাপতি জালাল উদ্দিন সোহেল মারা গেছেন। তিন মাসের জন্য গঠিত এই কমিটি এখন ৭ বছর মেয়াদ পার করেছে। এর মধ্যে ছাত্রদলের ১০ সদস্য সবাই কেউ বিএনপি, কেউ যুবদল ও কেউ স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে ঢুকে গেছেন। তারা এখন একসাথে দুটি সংগঠনের পদে দায়িত্ব পালন করছেন।
নগর ছাত্রদল নেতারা জানিয়েছেন, গত ৭ বছরে ১০ দফা কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে সেসব উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।
নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ সুপ্রভাতকে অভিযোগ করে বলেন, গত ৭ বছরে বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে কমিটি করতে পারিনি। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ছাত্রদলকে বিএনপি থেকে আলাদা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। যে কোনো মূল্যে এবার নগর ছাত্রদলের কমিটি উপহার দিতে চাই।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগঠন না থাকলে কীসের মেয়র নির্বাচন? সংগঠন ঠিক রেখে মেয়র নির্বাচনের কথা ভাবতে হবে।
নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু বলেন, এবারের উদ্যোগে যদি কমিটি না হয় তাহলে নগর ছাত্রদল ধ্বংস হয়ে যাবে।