প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন প্রকল্পে ঢালাওভাবে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ না দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। দেশের কোনো ক্ষতি হয় এমন পরামর্শ গ্রহণ না করা এবং নিজেদের দেশের ভালো কিসে হয় সেটি উপলব্ধি করতেও সরকারি কর্মকর্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি নিজের দেশকে নিয়ে ভাবা, কাজকে নিজের মনে করার মানসিকতা এবং দেশের কল্যাণের জন্য আত্মত্যাগ করার মনোভাব জাগ্রত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের বলেন।
আমাদের দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার রীতি দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। একসময় আমাদের বাজেট বিদেশি ঋণ এবং অনুদান নির্ভর ছিলো, এর একটি বড়ো অংশ চলে যেতো বিদেশি পরামর্শক, বিদেশি উপদেষ্টাদের বেতনÑভাতা এবং আনুষঙ্গিক খরচে। বিদেশি পরামর্শক, উপদেষ্টারা আমাদের দেশের অর্থনীতি, সমাজ, জনগণের চাহিদা, প্রকল্পের জনউপযোগিতা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেন না, দেশের আমলাতন্ত্র বিদেশিদের পরামর্শ গ্রহণ করতে অভ্যস্ত ছিল। এর ফলে জনগণ প্রকল্প থেকে উপযোগিতা যথাযথভাবে পায়না। ঋণের টাকার সঠিকভাবে ব্যয় করা ও নানা অব্যবস্থাপনা, অনিয়মের কারণে সম্ভব হয়না।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এখন বেড়েছে। দেশীয় বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা এখন অনেক অগ্রসর, আমাদের বাজেটেও বিদেশি ঋণের পরিমাণ স্বল্প। আমরা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাহায্যে পরিকল্পিত অর্থনীতি, নিজেদের অর্থায়নে বড় বড় প্রকল্প সম্পন্ন করছি। তবে যে সব প্রকল্প একেবারে আধুনিক এবং উন্নত প্রযুক্তি ও উচ্চ কারিগরি জ্ঞাননির্ভর সেসব ক্ষেত্রে বিদেশি পরামর্শকের প্রয়োজন রয়েছে যেমন পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, কর্ণফুলী টানেল, পারমাণবিক বৈদ্যুতিক প্রকল্প, গভীর সমুদ্র বন্দর ইত্যাদি। তবে এসব প্রকল্পে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, পরিহার করতে পারলে, যথাসময়ে প্রকল্প শেষ করতে পারলে সরকারি অর্থের সাশ্রয় কিছুটা হলেও সম্ভব। সকল প্রকল্পের জন্য বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ কিংবা সাধারণ প্রকল্পেও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের অজুহাতে ঢালাও বিদেশ ভ্রমণও কাম্য নয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো, একই ব্যক্তিকে একাধিক প্রকল্পের প্রকল্পÑপরিচালক নিয়োগ, প্রকল্পের কেনাকাটায় দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে এনইসি বৈঠকে বারবার কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছেন। এসব বিষয়গুলিতে যথাযথ গুরুত্ব দিলে প্রকল্পের অনাবশ্যক ব্যয় পরিহার করা সম্ভব। দেশীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে, স্বনির্ভরতা অর্জনে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে সচেষ্ট হতে হবে।
আগামী বাজেটের আকারও বাড়ছে। করোনার এ সময়ে জীবন জীবিকার চাকা সচল রাখতে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা সেভাবে সাজাতে হবে। আধুনিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি উৎকর্ষতা ও দক্ষতা অর্জন করতে পারলে বিদেশি পরামর্শকদের ওপর নির্ভরতা কমে আসবে। প্রধানমন্ত্রী এ লক্ষ্যে গবেষণার ওপর জোর দিয়েছেন যাতে আমাদের সক্ষমতা বাড়ে।
মতামত সম্পাদকীয়