এবার ইসির উপ-সচিবসহ দুদকের মামলায় ১১ আসামি
নিজস্ব প্রতিবেদক >>
একে একে বের হয়ে আসছে থলের বিড়াল। জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করার দায়ে ইতিমধ্যে তিন মামলার পর গতকাল আরো দুই মামলা হয়েছে। নতুন করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুই মামলায় নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিবসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর এতে রোহিঙ্গাসহ ৫৫ হাজার ৩১০ জনকে অবৈধভাবে ভোটার করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বাদী হয়ে গতকাল বুধবার চারজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মিরসরাই উপজেলায় ব্যবহার করার জন্য চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসের সাবেক অফিস সহায়ক রাসেল বড়ুয়া ২১ অক্টোবর ২০১৫ সালে পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন অফিসের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট মোস্তফা ফারুককে ভোটার তালিকা নিবন্ধনে ব্যবহৃত উবষষ খধঃরঃঁফব ৬৩০, ঝবৎারপব ঞধম ঘঁসনবৎ- এণঝচঝওঝ-৪২১৪ ব্র্যান্ডের একটি ল্যাপটপসহ বিভিন্ন মালামাল হস্তান্তর করেন। তিনি এসব মালামাল গ্রহণ করে মিরসরাইয়ে নিয়ে যান। পরবর্তীতে এসব মালামাল ফেরত আসার কথা অফিসিয়ালি স্বীকারও করা হয়। তবে ল্যাপটপটি হালনাগাদে বিভিন্ন উপজেলায় ব্যবহৃত হয়েছে মর্মে বলা হলেও ল্যাপটপটির সর্বশেষ অবস্থান সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসকে রাসেল বড়ুয়া ও মাহফুজুল ইসলাম হদিস দিতে পারেননি। মূলত: এই ল্যাপটপ ব্যবহারের মাধ্যমে তারা অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাসহ ৫৫ হাজার ৩১০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করেন।
পরবর্তীতে ল্যাপটপের সন্ধানে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণসহ তদন্ত হলেও তৎকালীন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা খোরশেদ আলম ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তকরণ কাজে এবং জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিকরণে ব্যবহৃত বিশেষায়িত সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত ল্যাপটপটি উদ্ধারের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এমনকি উক্ত বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে না এনে তিনি দোষীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন। ল্যাপটপটি গায়েব হয়ে যাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি না করে তার উপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে একে অপরের সহযোগিতায় ল্যাপটপটি আত্মসাত করেছেন। এঘটনায় সাবেক সিনিয়র জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার বর্তমানে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ-২ এর উপ-সচিব খোরশেদ আলম, জেলা নির্বাচন অফিসের সাবেক উচ্চমান সহকারী বর্তমানে কক্সবাজারে জেলার রামু উপজেলা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক রাসেল বড়ুয়া, পাঁচলাইশ থানা নির্বাচন অফিসের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট মোস্তাফা ফারুককে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া অবৈধ উপায়ে রোহিঙ্গা দম্পত্তিকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুকরণের ঘটনায় অপর একটি মামলায় গতকাল নির্বাচন কমিশনের তিন কর্মচারীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। দুদক জেলা কার্যালয়-২ এ মামলাটি দায়ের করেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুভাষ চন্দ্র দত্ত।
মামলার আসামিরা হলেন ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন, চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক নুর আহমেদ, কক্সবাজার উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নাঈম উদ্দীন, টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ওবায়দুল্লাহ, ঈদগাঁও পূর্ব গোমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুর রহমান, কক্সবাজার সদরের দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকার ফয়জুল্লাহ ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন।
এনআইডি জালিয়াতির বিষয়ে মামলার বাদি দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, এনআইডি জালিয়াতিতে একটি চক্র পরস্পরের যোগসাজশে কাজ করেছে। তাদের অর্পিত দায়িত্বের অপব্যবহার করে ভোটার করা হয়েছে। তাই দুদক আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।