দেশের আলুর বাজার এগ্রো সিন্ডিকেটের লোভের বলি বলে মন্তব্য করেছেন মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক এবং চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। গতকাল বুধবার সকালে নগরীর অন্যতম বৃহৎ পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্র রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় সুজন ব্যবসায়ীদের কাছে আলুর দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন মোবাইল ফোনে ব্যাপারীরা আলুর দাম ঠিক করে দেয়। আমরা বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীগণ আলু বিক্রি করে শুধু কমিশন পাই। মুন্সীগঞ্জের কোল্ড স্টোরেজগুলো আলুর মজুদ করে রেখেছে। পাশাপাশি করপোরেট কোম্পানিগুলোও আলুর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
এসময় সুজন বলেন আলু দেশে উৎপাদিত একটি পণ্য। এটি আমদানি করা পণ্য নয়। সহজলভ্যতার কারণে সব পরিবারের রান্নাঘরে আলু একটি জনপ্রিয় তরকারি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সে হিসেবে আলুর কদর সব সময়ই একটি বেশি থাকে। ডলারের দাম বৃদ্ধি কিংবা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সঙ্গে আলুর দাম বাড়ার কোন সম্পর্ক নেই। আলুর পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকার পরও এগ্রো সিন্ডিকেটের কারণে আলুর দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ভরা মৌসুমে আলুর দাম এতো বৃদ্ধি হওয়ার কোন কারণ নেই বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা জানতে পেরেছি মুন্সীগঞ্জভিত্তিক একটি সিন্ডিকেট এবং তথাকথিত এগ্রো সিন্ডিকেটগুলো আলুর দাম বৃদ্ধির সাথে জড়িত। সেখান থেকেই দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের সে দামেই আলু বিক্রি করতে হচ্ছে। সরকার কৃষিপণ্য সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করছে। সার, বীজ এবং কৃষি উপকরণে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিলেও সাধারণ ক্রেতা এর সুযোগ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখন এগ্রো নামধারী সিন্ডিকেটরাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। দেখা যাচ্ছে যে আলু, ডিম, মুরগি, চাল, ভুট্টা, গরু, দুধসহ সকল পণ্য তাদের দখলে চলে যাচ্ছে। এসব এগ্রো নামধারী সিন্ডিকেটের হাত থেকে দেশের বাজারকে রক্ষা করতে হবে।
আরো জানা যাচ্ছে এসব এগ্রো সিন্ডিকেট প্রান্তিক কৃষকদের নানাভাবে প্রলোভন দিয়ে আলু ক্ষেতে অন্যান্য পণ্যের চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে। তাদের নানামুখী অপতৎপরতা কৃষির উন্নতির চেয়ে ক্ষতি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে এসব সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা রোধে সমন্বিতভাবে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।
চসিকের সাবেক প্রশাসক আরো বলেন যখন যেসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি করার অপচেষ্টা করা হবে তখনই সেসব পণ্য পাশর্^বর্তী দেশ থেকে আমদানি করার অনুমতি দিতে হবে। সিন্ডিকেট যাতে ভোক্তা সাধারণকে কোন প্রকার অসুবিধায় ফেলতে না পারে সেজন্য সারা বছরই এসব সিন্ডিকেটের উপর নজরদারি রাখারও আহ্বান জানান তিনি।
সরেজমিনে রিয়াজউদ্দিন বাজারে গিয়ে দেখা যায় পাইকারি বাজার এবং খুচরা বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দামের ফারাক রয়েছে। সেখানে পাইকারি এবং খুচরা বাজার পাশাপাশি অবস্থান করলেও প্রতি কেজি সবজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দামের তারতম্য লক্ষ্য করা গেছে। এতে করে ক্রেতা সাধারণের পকেট থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। তাই ক্রেতাদের স্বস্তি দিতে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে প্রতিনিয়ত এসব বাজারে অভিযান পরিচালনা করার আহ্বান জানান সুজন। নাগরিক উদ্যোগ ধারাবাহিকভাবে নগরীর প্রতিটি বাজারে নিয়মিত মনিটরিং করবে বলে জানান তিনি।
তিনি বাজারে ঘুরে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সাথে কথা বলেন। বাজারে আগত সকলেই এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ, নজরুল ইসলাম আশরাফী, রুহুল আমিন তপন, সাইদুর রহমান চৌধুরী, রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি রফিক আহমদ, ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন, আবু তৈয়ব, সাধারণ সম্পাদক ফারুক শিবলী, আজগর হোসেন, হারুনুর রশীদ লিটন, জাফর আহমেদ, মোরশেদ আলম, মিজানুর রহমান মিজান, অনির্বাণ দাশ বাবু, শহীদুল আলম লিটন, মাহফুজ চৌধুরী, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হাসান আহমেদ ইমু, আরাফাত সজোয়ার জিকু, মনিরুল হক মুন্না, শাহনেওয়াজ আশরাফী, হাবিব রহমান, তন্ময় দাশগুপ্ত ও জয়জিৎ চৌধুরী। বিজ্ঞপ্তি