সুপ্রভাত ডেস্ক »
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, এখন কেউ মোটা চালের ভাত খায় না, কেউ মোটা কাপড়ও পরে না।
তবে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের যে কষ্ট হচ্ছে, সেটি স্বীকার করে তিনি বলেছেন, জিনিসপত্রের দাম কমাতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
সচিবালয়ে সোমবার প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ প্রকাশিত ‘সংবাদপত্রে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের পর সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। খবর বিডিনিউজের।
বাজেটের আকার বেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের অসুবিধা হচ্ছে না, তা নয়। তবে সার্বিকভাবে মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়ার পাশাপাশি মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে।
‘গত সাড়ে ১৪ বছরে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আড়াই থেকে তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হিসাব করে দেখুন, একজন সাধারণ মানুষ যিনি শ্রমিকের কাজ করেন, আজ থেকে ১৪ বছর আগে সারা দিন কাজ করে কয় কেজি চাল কিনতে পারতেন, এখন কয় কেজি চাল কিনতে পারে।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাড়ে ১৪ বছর আগে একজন রিকশাওয়ালা সারা দিন রিকশা চালিয়ে ৪-৫ কেজি চাল কিনতে পারতেন, এখন কমপক্ষে ১০ কেজি চাল কিনতে পারেন বা আরও বেশি, ১০ থেকে ১৫ কেজি চাল কিনতে পারেন।
‘কোন চাল কিনছেন? দেশে আগে মানুষ বলতো- মোটা ভাত, মোটা কাপড়। এখন মোটা চাল কোথাও বিক্রি হয় না। মোটা চাল বাজারে বিক্রিই হয় না, মোটা চাল এখন গরুকে খাওয়ায়, মোটা চাল এখন হাঁস-মুরগিকে খাওয়ায়।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আগে মানুষ বলত ডাল-ভাত, এখন মানুষ মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে কেন সেটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এখন আর মোটা ভাত ও আর মোটা কাপড় নয়, এখন মোটা কাপড়ও কেউ পরে না, এটাই হল পরিবর্তন। পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি তো, সেজন্য অনেক সময় অনুধাবন করতে পারি না।’
জিনিসপত্রের দাম কমাতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
রোববার চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে নিবন্ধনহীন চারটি আইপিটিভি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সারা দেশে এমন অভিযান চলবে কিনা তা তথ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চান একজন সাংবাদিক।
মন্ত্রী জানান, সরকার ৫০টি মতো বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে, এরমধ্যে ৩৬টি টিভি সম্প্রচারে আছে। এসব টিভি চ্যানেলগুলোকে মাসে বিটিআরসিকে ২০ লাখ টাকার বেশি ফি দিতে হয়।
‘কিন্তু কোনো অনুষ্ঠানে গেলে দেখবেন এসব টেলিভিশন চ্যানেলের মতই তারা বুম নিয়ে হাজির হয়। এদের কোনো অনুমোদন নেই। এরা চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত। সম্প্রচার নীতিমালা অনুযায়ী আইপিটিভি বা ইউটিউব চ্যানেলে সংবাদ প্রচার করা যায় না।
‘অনেকের পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য চাঁদা নেয়, বিপক্ষে সংবাদ করার হুমকি দিয়ে চাঁদা নেয়। এ কাজগুলো সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেওয়া হয়েছে অভিযান চালানোর জন্য। যাদের বৈধ লাইসেন্স নেই, যারা চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।’
সরকার অভিযান চালিয়ে যেসব আইপিটি টিভি বন্ধ করে দিচ্ছে, সেগুলো জেলা-উপজেলায় সাংবাদিক নিয়োগ দেওয়ার জন্য টাকা নেয় জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘(নিয়োগ পাওয়ার পর সাংবাদিকদের) মাসে মাসে তাদের কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা পাঠাতে হয়। এই অবৈধ কাজকারবার বন্ধ হওয়া প্রয়োজন, সে কারণে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।’
সরকার ‘নির্যাতন-নিপীড়ন’ করায় জাতির অর্জন অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে বলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন। এ নিয়ে এক প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, সাড়ে ১৪ বছরে জাতির অনেক অর্জন আছে, এটি মির্জা ফখরুল স্বীকার করেছেন।
‘সরকার কারও উপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে না। যারা আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছে, পুলিশের ওপর হামলা করেছে এবং এখনও করছে, যারা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরদের নেতৃত্বে রাস্তায় গাড়িঘোড়া ভাঙচুর করেছে তাদের বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
‘বিএনপির নেতাদের দুর্বলতা হচ্ছে তারা সন্ত্রাসী আর রাজনৈতিক কর্মী গুলিয়ে ফেলেছে। তারা নিজেরা রাজনীতির নামে সন্ত্রাস করেন বিধায় সন্ত্রাসী কর্মকা- আর রাজনৈতিক কর্মকা-ের মধ্যে পার্থক্য করেন না। কিন্তু এই দুই কর্মসূচির মধ্যে পার্থক্য আছে। কিন্তু বিএনপির কর্মসূচি হচ্ছে সন্ত্রাসমুখো কর্মসূচি।’