নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি »
‘গনশুনানিতে বিভিন্ন জনের নানা মতের কথা শুনেছি। ভীষণভাবে অসন্তুটি, চাঁদাবাজি, অপহরণ-খুন এগুলোর কারণে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। তবে এখনই হতাশ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা কিছুই হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।
গতকাল বুধবার সকালে রাঙামাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনসস্টিটিউট সম্মেলন কক্ষে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগে গণশুনানিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠান শেষে চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের আরও জানান, এই এলাকায় উন্নয়ন বিঘিœত হচ্ছে, সেটা আমরা উপলব্ধি করছি। আপনাদের কষ্টের কথাগুলো যথাযথ মাধ্যমে পৌঁছে দিয়ে পদক্ষেপ নিতে কাজ করব।
চট্টগ্রাম মেডিক্যালে ডায়ালাইসিস করতে বাড়তি টাকা নেয়ার প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আইনি প্রক্রিয়াই এগিয়েছি। আইনের মাধ্যমে এটা বের হবে কেউ কোন দোষ করেছে কিনা। ইতোমধ্যে একটা প্রতিকার পাওয়া গেছে। যাকে আটক করা হয়েছিল তাকে জামিন দেয়া হয়েছে। যাকে আটক করা হয়েছে তার তেমন কোন দোষ ছিলো না। চট্টগ্রাম মেডিক্যালে ডায়ালাইসিস করার টাকা যেটা বাড়ানোর কথা ছিলো সরকার বিবেচনা করে আগের পর্যায় রেখেছে। আমি মনে করি এটা এক বিরাট প্রতিকার।
মামলাও চলবে। যার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তিনি বা কেউ ভুল মামলা করে থাকলে সেটা আদালতে বিচার করবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের যুগ্ম সচিব নারায়ন চন্দ সরকার, সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা, কমিশনের সদস্য কাওসার আহমেদ, মো. আমিনুল ইসলাম, কংজরী চৌধুরী, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ ও তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি হেডম্যান-কার্বারিরা উপস্থিত ছিলেন।
গনশুনানিতে অংশ নেয়া সাধারণ মানুষ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিপ্রিয় পাহাড়ি-বাঙালি সবাই মানবাধিকার নিয়ে বাঁচতে চায়। কিন্তু শান্তিপ্রিয় মানুষ অবৈধ অস্ত্রের কারণে নিজ বাড়িতে থাকতে পারছে না। নিজ বাড়িতে নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকার চাই। চুক্তির পর পাহাড়ে শান্তি না ফেরায় পাহাড়ে বসবাসকারী পাহাড়ি-বাঙালি উভয়ে অশান্তিতে বসবাস করছে। পাহাড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রুপকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিতে হয় বিভিন্ন আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা না হলে পাহাড়ে কোনদিন শান্তি ফিরবে না। চুক্তির পরে পাহাড়ে ২৫টি বেশি হত্যা হয়েছে। জুম্মজনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী জুম্ম সমিতির সন্তোশিস চাকমা বকুল বলেন, চুক্তির পরে ২৫টির বেশি গণহত্যা হয়েছে। বান্দরবানে পর্যটনের নামে ভূমি হারা হচ্ছে জুম্মরা। ভারতে পালিয়ে যাওয়াদের ফিরিয়ে আনতে সরকারকে আরও উদ্যোগ নিতে হবে। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য শান্তি চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
রাঙামাটি সিএনজি অটোরিক্স শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি পরেশ মজুমদার বলেন, চুক্তির পরে চাঁদার কারণে আমাদের অনেক চালক ভাই নিখোঁজ হয়েছেন। পরিবারের লোকজন এখনো তাদের অপেক্ষায় আছে। অবৈধ অস্ত্রের কারণে পাহাড়ি-বাঙালি সবাই কষ্টে আছি। প্রতিবছর অস্ত্রে ভয়ে চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হলে পাহাড়ে শান্তি বিরাজ করবে।
গনশুনানি চলাকালীন সমাবেশের বাইরে স্বজনহারা ও বিভিন্ন সময় ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ি ও বাঙালিরা পৃথক ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে প্রতিকার দাবি করে অবস্থান নেন।