নিজস্ব প্রতিবেদক »
চেহারা এক। নাম অনেক। একই চেহারার তিনটি জাতীয় পরিচয়পত্র। এসব পরিচয়পত্র ব্যবহার করে বিয়েও করেছেন অনেক। প্রতারণার শিকার হয়েছেন একাধিক পুরুষ। বিয়ের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা ও সম্পদ। ভিন্ন ভিন্ন নামের সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরি করেছেন একাধিক প্রতিষ্ঠানে। এমনই অভিযোগ উঠেছে এক নারীর বিরুদ্ধে।
প্রতারণার স্বীকার হয়ে মামলা করতে আসেন অভিযুক্ত নারীর দ্বিতীয় স্বামী প্রবাসী ইমাম হোসেন। জমা দেন প্রতারণায় ব্যবহৃত নানা কাগজপত্র। গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে এ মামলা করা হয়। মামলায় মিনু আক্তারসহ আরো দুই জনকে আসামি করা হয়েছে। একজন মোস্তফা জামিল (৩৭), অন্যজন রাশেদ (৩৯)।
মামলার অর্জিতে দেখা গেছে, ওই নারীর নাম কখনো মিনু, কখনো সুমি, কখনো ফাতেমা আবার কখনো বা রোমানা। ২০০৮ সালে তৈরি করা একটি জাতীয় পরিচয়পত্রে দেখা গেছে, মোছা. ফাতেমা খাতুন (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর-১৯৮৯৮৮১২৭২৭১৭০৫২৪ নাম ধারণ করে এই মহিলা স্বামী হিসেবে লুৎফর রহমান এবং মা হিসেবে শামসুন নাহারের নাম। ২০২০ সালের একটি জাতীয় পরিচয়পত্রে দেখা গেছে একই মহিলার নাম নাছমিন আক্তার সিমু (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর-৩৭৬৪৬৬৭০৫৫), পিতার নাম মো. আলী আহাম্মদ ও মাতার নাম শামসুন নাহার। অরেকটি নাগরিক সনদপত্রে দেখা গেছে পিতা-মাতার নাম ঠিক থাকলেও একই মহিলার নাম উল্লেখ রয়েছে মিনু আক্তার। ওই মহিলাই আবার পিতা-মাতার নাম এবং নিজের ঠিকানা একই রেখে ফাতেমা আক্তার রোমানা নাম নিয়ে ভিন্ন সনদ দিয়ে ঢাকার সাফা সোয়েটার লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।
অর্জিতে আরো জানা গেছে, ২০০৮ সালের বিয়ে করেন টাঙ্গাইলের লুৎফর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে। ২০০৮ সালের একটি এনআইডি কার্ডে ওই স্বামী লুৎফুর রহমানের নাম। একই মহিলা মিনু আক্তার নাম ধারণ করে ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ইমাম হোসেন নামে এক প্রবাসীকে বিয়ে করেন। কাতার প্রবাসী ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে বলবৎ থাকা অবস্থাতেই আবার ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গিয়ে বিয়ে করেন মোস্তফা জামিল নামে এক ব্যক্তিকে। তিনজন বৈধ স্বামীর পরিচয় পাওয়া গেলেও রয়েছে আরও অনেক স্বামী।
মামলার বাদী প্রবাসী ইমাম হোসেনের আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ সুপ্রভাতকে বলেন, মিনু আক্তারের বহু এনআইডি কার্ড এবং বিভিন্ন নামে নাগরিক সনদ বানিয়ে বৈবাহিক প্রতারণাসহ ফেসবুক, ইমো, হোয়াটস অ্যাপে বিভিন্ন নামে অ্যাকাউন্ট খুলে দেশি ও প্রবাসীদের সঙ্গে ভিন্ন ধরনের প্রতারণা করেছে। এক নারীর ৪টি ভিন্ন নামের পরিচয়পত্র, তিনজন বৈধ স্বামী, বৈবাহিক সম্পর্ক বলবৎ থাকা অবস্থায় অন্য পুরুষকে বিয়ের ডকুমেন্ট আদালতের নজরে আনার জন্য ফিরিস্তি আকারে সাবমিট করা হয়েছিল। একাধিক প্রতিষ্ঠানে ছদ্মনাম এবং ভিন্ন ভিন্ন নামের সার্টিফিকেট ব্যবহার করে একাধিক চাকরিও করেছেন মিনু আক্তার। আদালতে মিনু আক্তারসহ এ চক্রের তিন সদস্যের নামে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য বায়েজিদ থানাকে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।
বহুনামী এই নারীর বাড়ি রাঙামাটির মারিস্যায়। মামলার এজাহারে উল্লিখিত অভিযুক্তের মোবাইল নম্বরে বারবার চেষ্টা করেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে। তাই তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
এ মুহূর্তের সংবাদ