নিজস্ব প্রতিবেদক »
সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। সদালাপী, নিরহংকার এ মানুষটি সুবক্তা। বাংলা, ইংরেজি কিংবা ফারসি ভাষায় সমান দক্ষতায় সাবলীলভাবে দীর্ঘক্ষণ মানবতার বাণী শোনাতে পারেন। যখন কথাগুলো উচ্চারণ করেন, তখন মনে হয় কোনো কৃত্রিমতা নেই। তাঁর ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষিত। নাতি-নাতনিদেরও ভালো মানুষ হওয়ার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন।
বহুগুণে গুণান্বিত সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী পিএইচপি ফ্যামিলির কর্ণধার। বিশেষ করে সুফি ভাবধারার সাদামাটা জীবনযাপন দেশের শীর্ষস্থানীয় এ শিল্পপতিকে করেছে অনন্য। জীবদ্দশায় তিনি দেশের প্রথম শিল্পপতি হিসেবে ভূষিত হয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদকে। ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি সমাজসেবা আর শিক্ষায় তিনি নিরলস অবদান রেখে চলেছেন।
স্বাধীনতার পর ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে চট্টগ্রামে ব্যবসা শুরু করেন সুফি মিজানুর রহমান। এরপর পাঁচ দশকে নিজের হাতে একে একে গড়েছেন ৩৩টি প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১০ হাজার মানুষ বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন।
সুফি মিজানের পিএইচপি গ্রুপ বর্তমানে বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন করে। প্রতি বছর সরকারি কোষাগারে জমা দেন হাজার কোটি টাকা। ব্যবসার পাশাপাশি ইউআইটিএস নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও চালাচ্ছে পিএইচপি পরিবার।
মানবিকতায় ব্যতিক্রম সুফি সাধক মিজানুর রহমান ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি থেকে ইন্দোনেশিয়ার অনারারি কনসাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু তাই নয়, তার সুযোগ্য পুত্রদের মধ্যে তিনজন আরও তিনটি দেশের অনারারি কনসালের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
শুরুটা হয় সুফি মিজানের বড় ছেলে মোহাম্মদ মহসিনকে দিয়ে। ২০১৫ সালের ৩ মার্চ গাজীপুরে কোরিয়ার অনারারি কনসাল হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি।
এরপর ২০১৬ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকায় রুয়ান্ডার অনারারি কনসাল হিসেবে দায়িত্ব নেন মেঝো ছেলে মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।
আর সর্বশেষ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে মালয়েশিয়ার অনারারি কনসাল হিসেবে নিযুক্ত হন সুফি মিজানের অপর এক সন্তান মোহাম্মদ আকতার পারভেজ হিরু।
সুফি মিজান ও তার তিন ছেলের টেকনোক্র্যাট হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার সম্মান দেশে একক এবং অনন্য। দেশের আর কোনো শিল্পগোষ্ঠীর কপালে এমন পালক নেই।
বাবার মতো সুফি মিজানুর রহমানের বড় সন্তান মোহাম্মদ মহসিনও সুফি সংগীতের সাধক। শিল্প-বাণিজ্য বিস্তারের পাশাপাশি মানবিক মানুষ হিসেবেও তিনি দেশজুড়ে সমাদৃত।
সুফি মিজানের আরেক ছেলে আকতার পারভেজ হিরু তরুণ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী হিসেবে মেধার জৌলুস ছড়াচ্ছেন। হিরুর হাত ধরেই বাংলাদেশে প্রোটনের মতো বিশ্বজয়ী ব্র্যান্ডের গাড়ি সংযোজন শুরু হয়।
সুফি মিজান পরিবারে একই ছাদের নিচে চার টেকনোক্র্যাটের বিষয়ে অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘আমাদের পরিবারের আমরা চারজন চারটি দেশে নিজ দেশের পতাকা বহন করছি। এটা যেমন সম্মানের তেমনি অনেক দায়-দায়িত্বেরও।’
এমন দায়িত্ব দেশের জন্য দেশের বাইরেও কাজের সুযোগ প্রসারিত করে বলে মনে করেন সুফি মিজানের আরেক ছেলে চট্টগ্রামে মালয়েশিয়ার অনারারি কনসাল মোহাম্মদ আকতার পারভেজ।
তিনি বলেন, ‘দেশের বাইরেও নিজ দেশের পতাকা বহন করে দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। দেশের মানুষের কল্যাণে সেই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি।’