সুপ্রভাত ডেস্ক »
এক খেপ জাল ফেলে ১৭০ মণ ইলিশ তুললেন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া বাংলাদেশের একটি ট্রলার। বেশির ভাগ মাছই এক কিলোগ্রামের চেয়ে বড় ওজনের। কিছু আরও বড় মাছও ছিল, যার ওজন দুই থেকে আড়াই কিলোগ্রাম। পাথরঘাটা বাজারে পড়তে পায়নি সেই মাছ। কয়েক ঘণ্টায় সব মাছ বিক্রি করে প্রায় আধ কোটি টাকা পেয়েছেন ট্রলারের মালিক। তবে মাছ পড়ার খবর মোবাইল ফোনে আগাম পেয়েই ট্রলারের পাইলটের জন্য এক ভরির সোনার চেন গড়িয়ে রাখেন মালিক এনামুল হোসাইন। ট্রলার নিয়ে ঘাটে ভেড়ার পরে পাইলট ইমরান হোসেনকে সেই কণ্ঠহার পরিয়ে স্বাগত জানান মালিক।
বাংলাদেশে এ বার ইলিশের বাজার চড়া। পূবালি বাতাস বয়েছে, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হয়েছে বেশ কয়েক দিন। কিন্তু অন্য বারের মতো পদ্মা-মেঘনা বা দক্ষিণের সাগরে উপচে পড়েনি ইলিশ। তার মধ্যে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ছিল সব ধরনের মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা, কারণ এই সময়টায় মৎস্য কূলের প্রজনন ঋতু। ৬৫ দিনের সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরেও সাগরে ইলিশের ঝাঁক মিলছিল না। গত বছরও বাংলাদেশের জেলেরা প্রায় ৫ লক্ষ টন ইলিশ ধরেছিলেন। এ বারে চার পাঁচ দিন ঠায় সাগর ছেঁচে দু-এক ঝুড়ি ইলিশ নিয়ে ফিরছে এক একটি ট্রলার। খাটনি পোষাতে অন্য মাছ ধরার উপায় নেই। কারণ ইলিশ ধরার ২ ইঞ্চি ফাঁদি জালে অন্য মাছ আটকায় না। সেই এক একটি জালের ব্যাস প্রায় তিন কিলোমিটার। রাতে ফেলে সকালে তুললে অন্য বছর গলুই ভরে যেত রুপোলি শস্যে, বাংলাদেশ সরকার যাকে ‘জাতীয় শস্য’-এর মর্যাদা দিয়েছে। তবে এ বার তা হচ্ছে কই!
পর্যাপ্ত ডিজেল, বরফ, রেশন নিয়ে ১৭ অগস্ট বরিশাল বিভাগের বরগুণা জেলার পাথরঘাটা ঘাট থেকে ‘বদর, বদর’ বলে সাগরযাত্রা শুরু করে ট্রলার ‘এফ বি আল মদিনা’। ১৯ তারিখ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত নানা জায়গায় জাল পাতেন পাইলট ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে জেলেরা। মাছ মিলেছে সামান্যই। এর পরে চট্টগ্রামের অদূরে মৌখালির কাছে একটা জায়গায় সাগর জলের ভাবগতিক দেখে ট্রলার রুখে দেন ইমরান। সেইখানেই জাল ফেলার নির্দেশ দেন। সকালে জালের টান দেখেই হাসি ফেরে জেলেদের। গোছ করে জাল তুলতেই মণ মণ ইলিশ। আহ্লাদে নাচতে থাকেন তাঁরা। মালিক এনামুল হোসাইনকে ফোনে উত্তেজিত ইমরান বলেন, “শ’দেড়েক মণ ইলিশ তো হবেই। তা-ও ধরা পড়েছে জালের এক খেপে!” দ্রুত রাষ্ট্র হয়ে যায় ‘আল মদিনা’ ট্রলারের মাছ শিকারের সাফল্যগাথা। সেকরার দোকানে ছোটেন ট্রলার মালিক।
মঙ্গলবার, ২৪ তারিখ সকালে হাজারো মানুষের ভিড় পাথরঘাটা ঘাটে। ওই এসে ভিড়ল ‘আল মদিনা’! উল্লাসের মধ্যে মালিক এনামুল সালঙ্কার স্বাগত জানালেন পাইলটকে। মাছ নামিয়ে মেপে দেখা যায়, ওজন প্রায় ১৭০ মণ। ৬,৩৪৫ কিলোগ্রাম। খবর ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয়দের পাশাপাশি পাথরঘাটায় ভিড় জমিয়েছিলেন চাঁদপুর, সিলেট, চট্টগ্রামের পাইকাররাও। প্রবল হাঁকডাকে ৫০ লাখে উড়ে গেল ইলিশের ঝাঁক।
‘আল মদিনা’-র সাফল্যে আশার আলো দেখছেন অন্য মৎস্যজীবীরা — মরসুমের শেষ বেলায় তবে কি বাংলাকে মনে পড়ল তেনাদের?
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা