ঢাবি আইবিএ-চিটাগাং চেম্বারের উদ্যোগ
দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (সিসিসিআই) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)-এর যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসায় নির্বাহীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং প্রোগ্রাম আয়োজনের লক্ষ্যে ‘এক্সিকিউটিভ লার্নিং প্রজেক্ট ফর চট্টগ্রাম’-এর আওতায় ম্যানেজমেন্ট ডেভেলাপমেন্ট প্রোগ্রামের শুভ উদ্বোধন গতকাল বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। চিটাগাং চেম্বারের ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশ সেন্টার অব এক্সিলেন্স (বিসিই) এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। এই প্রথমবারের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইবিএ চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে যাচ্ছে। চেম্বার সভাপতি ও বিসিই’র চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি, বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য ও বিসিই’র বোর্ড অব ট্রাস্টি এম এ লতিফ এবং আইবিএ’র পরিচালক প্রফেসর সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার কো-চেয়ার হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। আইবিএ’র এসোসিয়েট প্রফেসর ও ম্যানেজমেন্ট ডেভেলাপমেন্ট প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. শাকিলা ইয়াসমিন কর্মসূচি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং বিসিই’র প্রধান নির্বাহী ওয়াসফি তামিম অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।
প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি বলেন, চিটাগাং চেম্বার ও আইবিএ অত্যন্ত চমৎকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা একটি দৃষ্টান্তমূলক মাইলফলক। এটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বাণিজ্য সংগঠনের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যার মাধ্যমে সহজে জাতীয় লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। তিনি সব ধরনের ব্যবস্থাপকদের জন্য সহজে ভর্তিযোগ্য এবং মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ আয়োজনের আহবান জানান। মন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবার কাছে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর এবং সে কারণে এ ধরনের উদ্যোগ দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। দক্ষতার অভাবে আমাদের দেশে সেবা আমদানি হয়ে থাকে। আমাদের তরুণ প্রজন্মের সফ্ট স্কিলের অভাব এবং মানসিক অনমনীয়তা পেশাগত দক্ষতা অর্জনে অন্তরায়। ভিন্নমত ধারণ ও সহনশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রশিক্ষণ প্রদানের ক্ষেত্রে সার্বজনীনতাকে প্রাধান্য দেয়ার অনুরোধ করে উপমন্ত্রী প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বৈষয়িক গুরুত্বের চেয়ে শিল্পভিত্তিক ও কারিগরি দক্ষতার দিকে গুরুত্ব দেয়ার আহবান জানান। একই সাথে চিটাগাং চেম্বারকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র মত দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সকল স্তরের শিল্পের জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও সাথে নিয়ে ‘নীড বেইজড’ প্রশিক্ষণ আয়োজনের আহবান জানান।
বিশেষ অতিথি এম এ লতিফ এমপি বলেন, মিডলেভেল ও টপলেভেল ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিংয়ের লক্ষ্যে চিটাগাং চেম্বার ও আইবিএ’র এই কর্মসূচির মাধ্যমে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বেশি উপকৃত হবে। বিশ্ব মহামারির কারণে পুরো পৃথিবীর মানুষ থমকে গেলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতিতে গতিসঞ্চারের লক্ষ্যে ১ লক্ষ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। সারাদেশে ১০০টি এসইজেড-এর পাশাপাশি মাতারবাড়ী এলাকায় গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে প্রায় এক ডজন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কাজেই নির্বাহীদের জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা চিটাগাং চেম্বারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ। আগামী দিনে আরো নতুন নতুন কোর্সের মাধ্যমে নির্বাহীদের যোগ্য করে গড়ে তুেেল চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতির গতি আরো ত্বরান্বিত করা সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা করেন এম এ লতিফ এমপি। তিনি চিটাগাং চেম্বার পরিচালকম-লী ও আইবিএ পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানান।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম দিনটিকে চট্টগ্রামের জন্য ঐতিহাসিক উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকতার সাথে এই যৌথ উদ্যোগ সফল করার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আইবিএ বাংলাদেশের খ্যাতনামা বিজনেস এবং ম্যানেজমেন্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মধ্যম ও উচ্চসারির নির্বাহীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন এবং জাতীয় অর্থনীতিতে আরো উৎপাদনশীল ও কার্যকর ভূমিকা পালনে এই কর্মসূচি অনেক সহায়ক হবে। এ ধরনের উদ্যোগ নিজস্ব মানবসম্পদ সৃষ্টিতে সাহায্য করবে, যা স্থানীয় পেশাদার টপলেভেল নির্বাহী সৃষ্টি করবে। এই কর্মসূচি মানসম্পন্ন এবং টেকসই হবে বলে চেম্বার সভাপতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রফেসর সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, সরকারের ভিশন ২০২১, ২০৩০-এর এসডিজি লক্ষ্যপূরণ এবং ২০৪১-এ উন্নত বাংলাদেশ গঠনসহ ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে মানবসম্পদের দক্ষতার উন্নয়ন অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক উপাদান। এক্ষেত্রে জাতীয় লক্ষ্যপূরণে মানসম্পন্ন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সকল স্তরের ব্যবস্থাপকদের দক্ষ করে গড়ে তোলা আইবিএ’র অন্যতম দায়িত্ব বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তিনি দেশের বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম চেম্বারের সাথে যৌথভাবে কাজ করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে চট্টগ্রামে মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রথমবারের মতো আইবিএ কর্তৃক প্রশিক্ষণ আয়োজনের যে শুভসূচনা হতে যাচ্ছে তা দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে সক্ষম হবে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চেম্বারের প্রাক্তন সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহমেদ, কনফিডেন্স সিমেন্ট-এর এমডি জহির উদ্দিন আহমেদ এবং প্রান্তিক গ্রুপের এমডি ইঞ্জিনিয়ার গোলাম সরওয়ার। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন চেম্বার পরিচালকবৃন্দ এ কে এম আকতার হোসেন, মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), এসএম আবু তৈয়ব, অঞ্জন শেখর দাশ, বেনাজির চৌধুরী নিশান, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, শাহজাদা মো. ফৌজুল আলেফ খান, চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক, বিকেএমইএ’র সাবেক পরিচালক শওকত ওসমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও চেম্বার পলিসি বিষয়ক সাবকমিটির আহবায়ক ড. মো. সেলিম উদ্দিন, উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক লুৎমিলা ফরিদ, বিভিন্ন করপোরেট হাউজের প্রতিনিধিবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগণ এবং সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ।
উল্লেখ্য, এই উদ্যোগের আওতায় ব্যবস্থাপনা ডিগ্রিধারী, নির্বাহী এবং ব্যবসায়ী সমাজকে শিল্পমুখী প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদানের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে আরো বেশি উৎপাদনমুখী ও কার্যকর অবদান রাখার লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হবে। চলতি বছরের নভেম্বর মাস থেকে শর্টকোর্সের মাধ্যমে এই প্রোগ্রাম চালু এবং পর্যায়ক্রমে লংকোর্স চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। কর্মসূচিতে ভর্তি প্রক্রিয়া, কারিকুলাম, শিক্ষক, প্রশিক্ষক, সনদ প্রদান ইত্যাদি সরাসরি আইবিএ কর্তৃক পরিচালিত হবে। এর বিশেষত্ব হচ্ছে, চট্টগ্রামে অবস্থিত প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী, নির্বাহী এবং শিক্ষার্থীদের এই প্রশিক্ষণে অগ্রাধিকার দেয়া। তবে ভর্তি পরীক্ষায় আইবিএ’র মান অনুসরণ করা হবে। যার ফলে কেবলমাত্র যোগ্য প্রার্থীরাই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এ প্রকল্পের আওতায় যারা ভর্তি হবেন তাদের কোনো ক্লাসের জন্যই ঢাকায় যেতে হবে না। কেবলমাত্র প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে সনদপত্র সংগ্রহ করতে হবে। বিজ্ঞপ্তি