এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ম না মানার প্রবণতা ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

নগরীর যান চলাচলে গতি আনতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়। সরকারি অর্থায়নে অসমাপ্ত প্রকল্পটিতে অনুদান হিসেবে ৩ হাজার ৭শ কোটি টাকা এবং ঋণ হিসেবে ৫২৪ কোটি টাকা প্রদান করে সরকার। ঋণ হিসেবে নেওয়া টাকা সরকারকে আবার পরিশোধ করতে হবে। সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ের টোল থেকে সরকারের ঋণের টাকা পরিশোধ করবে।
এরমধ্যে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত যান চলাচল শুরু হয় কয়েক মাস আগে। টোল পরিশোধ করে প্রতিদিন সিএনজি টেক্সিসহ অসংখ্য গাড়ি এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছ। নগরীর কেন্দ্র থেকে ২০ মিনিটে বিমানবন্দরসহ পতেঙ্গা এলাকায় পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ খুশি।
সরকার এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ ধরনের গাড়ি চলাচলের অনুমোদন দিয়ে টোল হার নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে। এতে মোটরসাইকেল ও কন্টেনার ট্রেইলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় মন্ত্রণালয় থেকে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গাড়ি টোল পরিশোধ করে চলাচল করছে। র‌্যাম্প নির্মিত না হওয়ায় শুরুতে লালখান বাজার থেকে উঠে পতেঙ্গা ছাড়া অন্য কোথাও নামার সুযোগ ছিল না। তবে মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করে কিছুদিন আগে পতেঙ্গা থেকে উঠে নিমতলায় নামা এবং নিমতলা থেকে উঠে লালখান বাজারে নামার দুটি র‌্যাম্প খুলে দেয় সিডিএ। শুরুতে কয়েকদিন ভালো থাকলেও পরে লালখান বাজার থেকে নিমতলা পর্যন্ত এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। লালখান বাজার ও নিমতলা র‌্যাম্প ব্যবহার করে রাতে–দিনে শত শত টেক্সি, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার এবং মাইক্রোবাস উল্টো পথে চলাচল শুরু করে। তারা লালখান বাজার থেকে রং সাইডে উঠে অন্তত ১০ কিলোমিটার পথ রং সাইডে চালিয়ে নিমতলায় গিয়ে ওঠার র‌্যাম্প ব্যবহার করে উল্টো পথে নেমে যাচ্ছে।
এক্সপ্রেসওয়েতে উল্টো পথে গাড়ি চলাচল ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে সিএনজি টেক্সি এবং নিষিদ্ধ মোটরসাইকেলের পাশাপাশি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের বেপরোয়া চলাচল লালখান বাজার–পতেঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। বিক্ষিপ্তভাবে অনেকগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে। এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ হলেও বলা হচ্ছে  ‘নানা পরিচয়ে গায়ের জোরে’ বাইক চালকেরা এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করছেন। নগরবাসীর সুবিধার জন্য পতেঙ্গা থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে বন্দরের নিমতলায় নামার পথটি খুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেপরোয়া গাড়ির দাপটের কারণে সিডিএ রোববার থেকে এই সুযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে।
উল্টো পথের অবৈধ চলাচল পুরো এক্সপ্রেসওয়েকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এক্সপ্রেসওয়ের মাঝখানে ডিভাইডার থাকায় বিপরীত দিকের কোনো গাড়ি সামনে আসবে না–এমন মাইন্ডসেট নিয়ে চালকেরা গাড়ি চালান। সেখানে হুট করে সামনে গাড়ি এসে পড়লে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে অনেকগুলো অঘটনও ঘটেছে।
কর্তৃপক্ষের লোকই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বাইক চালকেরা নিজেদের কখনো সাংবাদিক, কখনো পুলিশ, কখনো অন্য কোনো সংস্থার পরিচয় দিয়ে উল্টো পথে র‌্যাম্পে উঠেন। অনেক সময় পাহারাদারদের হুমকি ধমকি দিয়েও বাইক চালকেরা র‌্যাম্প ধরে উঠে যান। উল্টো পথের গাড়িগুলোও একইভাবে ক্ষমতা দেখিয়ে র‌্যাম্পে উঠে উল্টো পথ ধরে এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করে।
কোনো অন্যায় দিনের পর দিন চলতে দেওয়া যায় না। যদি দিনের পর দিন কোনো অন্যায় কাজ চলে তাহলে বুঝতে হবে তাতে কর্তৃপক্ষের সম্মতি আছে। যারা আইন ভঙ্গ করে তারা কখনোই সুনাগরিক নয়, তারা অপরাধী। অতএব অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো দ্বিধা থাকা উচিত হবে না। জনগণের অর্থ ব্যয় করে গড়ে তোলা কোনো প্রকল্পের সুফল থেকে জনগণকে বঞ্চিত করা দক্ষ প্রশাসনের লক্ষণ নয়।