নিজস্ব প্রতিবেদক »
সৌদি আরবে হজ করতে যাওয়া হাজীদের মিনা ও আরাফাতে অন্যের তাঁবু দখল করে নিজ কাফেলার হাজিদের গাদাগাদি করে থাকতে দেওয়া, যথাসময়ে হোটেল রুম না দেওয়া, নিম্নমানের হোটেল রুম ও খাবার পরিবেশন, বাসে গাদাগাদি করে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের একটি হজ্ব কাফেলার বিরুদ্ধে। তাতে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হাজীরা সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। তবে হজ্ব কাফেলার পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করা হয়েছে।
অভিযোগ ওঠা চট্টগ্রামের ওই হজ্ব কাফেলার নাম ‘আল ইমাম ইন্টারন্যাশনাল’। নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে এটির অবস্থান। চলতি হজ মওসুমে এ কাফেলাটি ১০৩ জনকে হজে নিয়ে যান। বর্তমানে ওই কাফেলার ৯৪ জন হাজি সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। অবশিষ্ট ৯জন হাজি গতকাল মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন। এদের মধ্যে ছিলেন ব্যারিস্টার আশরাফুল হাদী ও ব্যবসায়ী ইমন মাহমুদ।
অভিযোগে তারা সুপ্রভাতকে বলেন, ‘সৌদি আরবে যাওয়ার পর থেকে হাজীদের ন্যায্য সুযোগ-সুবিধা দিতে কৃপণতা দেখিয়েছেন ‘আল ইমাম ইন্টারন্যাশনাল’ এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মুনির উদ্দিন। তাদের জনপ্রতি প্যাকেজের মূল্য ছিল ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এর বাইরে ঢাকার এক দম্পতিকে আলাদা রুম দেওয়ার জন্য প্যাকেজ মূল্য থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৮ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। কিন্তু সৌদি আরবে যাওয়ার পর থেকে তারা পদে পদে ভোগান্তির শিকার হন। মক্কায় হোটেলে তাদের ৪ জনের রুমে ৬ জনকে গাদাগাদি করে থাকতে দেওয়া হয়। এমনকি পুরুষদের রুমে মহিলাদেরও থাকতে বলা হয়। তাতে বড় বেকায়দায় পড়েন হাজীরা। মিনা ও আরাফাতে থাকতে দেওয়া হয় অন্যের তাবুতে। তাতে হাজীদের গাদাগাদি করে থাকতে হয়। তাঁবুতে ছিল না বালিশ, ছিল টয়লেটের সংকটও। হাজিদের মিনা থেকে আরাফাত এবং আরাফাত থেকে মুজদালিফা যাতায়াতে ছিল তীব্র পরিবহন সংকট। আরাফাত থেকে মুজদালিফা যেতে ১০৩ হাজীকে দেওয়া হয় ৫৩ সিটের একটি বাস। তীব্র যানজটের মধ্যে বাসটিতে গাদাগাদি করে হাজীরা কেউ বসে, আবার কেউ দাঁড়িয়ে মুজদালিফায় আসেন। কয়েক ঘণ্টার এ যাতায়াতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সমস্যা এখানেই শেষ নয়, পরবর্তীতে মদিনায় তারা হোটেল বরাদ্দ না পেয়ে মসজিদে রাত কাটিয়েছেন।’
হাজীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা হয় ‘আল ইমাম ইন্টারন্যাশনাল’ এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মুনির উদ্দিনের সাথে। সৌদি আরব থেকে তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন ও ব্যবসার ক্ষতি করতে এসব অভিযোগ করা হয়েছে। কাফেলার ১০৩ জন হাজিকে মিনা ও আরাফাতে ২টি বাসে করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তীব্র যানজটের কারণে আরাফাত থেকে মুজদালিফায় হাজীদের দুইটি বাসে করে নেওয়ার সুযোগ ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে একটি বাসে করে হাজীদের নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া হোটেল ম্যানজারের ভুলে হোটেল রুম পেতে একটু বিলম্ব হয়। পরে আমি অন্য হোটেলে তাদের রুম দিয়েছি।’
মিনা ও আরাফাতে অন্যের তাঁবু দখল করে হাজিদের রাখার অভিযোগ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ মুনির উদ্দিন বলেন, ‘এটি সত্য নয়। মিনা ও আরাফাতে প্রায়শঃ হাজিরা ভুল করে অন্য কাফেলার তাঁবুতে ঢুকে পড়ে। তেমনটি ঘটে ছিল আমাদের তাঁবুতে। অন্য কাফেলার মানুষ আমাদের তাঁবুতে ঢুকে পড়ে। পরে তাদের মোয়াল্লেমকে জানালে তিনি তাদের আরেকটি তাঁবুতে আমাদের হাজিদের থাকতে দেন। এটি শুধু মিনায় ঘটে ছিল। আরাফাতে আমাদের হাজিরা আমাদের কাফেলার তাঁবুতেই ছিলেন। তাছাড়া বিশাল এ হজ যজ্ঞে অনেকে নিজেদের তাবু খুঁজে পান না। এ ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের কয়েকটি কাফেলার কয়েকজন হাজীকে মানবিক কারণে আমাদের তাঁবুতে স্থান দিয়েছি।’