কক্সবাজার
মিলছে না মাছ
নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
কক্সবাজার সাগর উপকূলের বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণ করতে যাওয়া জেলেরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। সাগরে তেমন একটা মাছের দেখা নেই। শূন্য হাতে ফিরছে অনেক ট্রলার। এছাড়া অনেক ট্রলার মালিক ইতোমধ্যে আর্থিক ক্ষতি পোষাতে না পেরে উপকূলে নোঙর করে রেখেছেন ট্রলার।
তার উপর একদিকে সাগরে জলদস্যুদের উৎপাত ও অপরদিকে ট্রলার ডুবির ঘটনা জেলেদের হতাশাগ্রস্ত করে ফেলছে। এছাড়া শুরু হয়েছে মাহে রমজান। ক’দিন বাদেই ঈদের খরচ। কোন কিছুই যেন মাথায় ঢুকছে না জেলে পরিবারের কর্তাদের।
জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গোপসাগরের মাছ আহরণে যাওয়ার সময় কক্সবাজার উপকূলের নাজিরারটেক মোহনায় একটি ফিশিং ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এসময় ট্রলারে থাকা সাগরে ভাসমান অবস্থায় ১৭ জেলেকে উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। ঘটনার পর ১০ জন এবং পরে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ট্রলারে থাকা মোট ১৭ জনকে উদ্ধার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ট্রলারটির মালিক জয়নাল আবেদীন জানান, মাছ আহরণে যাওয়া ট্রলারটি সাগরে বিশেষ বস্তুুর সাথে ধাক্কা লেগে তলা ফেটে যায়। এক পর্যায়ে ট্রলারটি ডুবে যেতে থাকে। ফলে জেলেরা সাগরে ভাসমান হয়ে পড়ে। পরে তাদের চিৎকারে সাড়া দিয়ে স্থানীয় অন্যবোটের জেলেরা তাদের উদ্ধার করে।
ট্রলারটির মাঝি রফিকুল ইসলাম জানান, দুই সপ্তাহের জন্য গভীর সাগরে মাছ আহরণে যাচ্ছিলাম। প্রতিমধ্যে চ্যানেলটিতে পৌঁছার পর বড় একটি ধাক্কা লাগে। এরপরে ট্রলারটিতে পানি ঢুকে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ভাসমান অবস্থায় সবাইকে উদ্ধার করা হয়। এতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে ১৭ মার্চ কক্সবাজার মহেশখালী সোনাদিয়া চ্যানেলে মাছ ধরার ট্রলার ডুবে ২ জেলের মৃত্যু হয়েছে। নিহত জেলেরা হলেন, কুতুবজোম ইউনিয়নের আব্দু শুক্কুরের ছেলে নেছার মিয়া (৩৫) ও একই এলাকার আবু তাহেরের ছেলে আরিফ উল্লাহ (২৬)। কুতুবজোম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয়রা জানায়, নিহতদের লাশ উদ্ধারের কয়েক দিন আগে কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়া এলাকার মো. পারভেজের মালিকানাধীন ফিশিং বোটে ১৪ জন জেলে মাছ ধরতে যান। সেখানে দুদিন আগে মাছ ধরার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রলারটি। এ সময় ২ জেলে মাছ ধরার জালের সঙ্গে পেঁচিয় পানিতে ডুবে মারা যান। বাকি ১২ জেলে জীবত অবস্থায় তীরে ফিরে আসে।
অপরদিকে ১৪ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১২টার দিকে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার মহেশখালী চ্যানেলে অভিযান চালিয়ে ৬ জলদস্যুকে আটক করেছে র্যাব-১৫। এ সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কক্সবাজারের মহেশখালী সোনাদিয়ায় অভিযান চালিয়ে ৫ জলদস্যুকে আটক করে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে দেশীয় তৈরি বন্দুক ও রাম দা উদ্ধার করা হয়েছে। আটক দস্যুরা হলেন সোনাদিয়ার মাহমুদের ছেলে মো. রাসেল (৩২), মাতারবাড়ী নতুন বাজারের নুরুল হোসনের ছেলে ওয়াজ উদ্দিন (২৭), মাতারবাড়ী মিয়াজির পাড়ার আবুল হোসনের ছেলে মো. সাগর (২৫), মাতারবাড়ী সাইরার ডেইলের আবুল হোসনের ছেলে আব্দুল মালেক (৩৫) ও কক্সবাজার সদরের নাজিরাটেকের টেকপাড়ার মিয়া হোসেনের ছেলে মো. শহিদ।
ওসি জানান, সোনাদিয়ার পূর্ব-পশ্চিম পাড়ার বরইতলা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ডাকাতির প্রস্তুুতিকালে তাদের আটক করা হয়।
তিনি জানান, ২২ ডিসেম্বর বঙ্গোপসাগরে ৪টি ট্রলারে ডাকতির সময় জলদস্যুর গুলিতে গুলিবিদ্ধসহ ১৫ জন আহত হয় এবং নগদ টাকা, মাছসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ডাকাতি করে নিয়ে যায়। এর পরে জলদস্যুদের ধরতে বিভিন্নস্থানে পুলিশ অভিযান চালায়। পুলিশ তাদের বন্দুকসহ আটক করে করতে সক্ষম হয়।