গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসাসেবার প্রধান কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা উপজেলা হাসপাতাল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর সকল উপজেলায় ৩১ শয্যাবিশিষ্ট থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপন কাজ শুরু করেছিলেন। কালক্রমে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব, বাড়তি রোগী – এসব কারণে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির অধিকাশই ৫০ শয্যায় রূপান্তরিত হয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে এসব হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আধুনিক যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম ও অন্যান্য সুবিধা থাকা জরুরি কিন্তু এসবের ঘাটতি রয়েছে প্রায় প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালে। একটি জাতীয় দৈনিকে এতদসংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রতিটি বিভাগেই উপজেলা হাসপাতালগুলিতে অর্ধেকেরও বেশি চিকিৎসক পদ খালি পড়ে রয়েছে। এর ফলে গ্রামাঞ্চল ও উপজেলার অধিবাসীরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তাদের শহরের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ছুটতে হয়, তাদের ভোগান্তি বাড়ে। অধিক অর্থ খরচ করতে হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট তথ্য অনুসারে ৪৯২টি উপজেলায় বিভিন্ন পদে ১০ হাজার ৪৭১ টি পদের অনুমোদনের বিপরীতে ৪ হাজার ৩৪১ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের ৯২টি উপজেলা হাসপতালে ৮৪ জন আর এম ও পদে ৫১ জন, ৫২৮টি পদের বিপরীতে ২৭৯ জন জুনিয়র কনসালটেন্ট, ১৪২০টি পদের মধ্যে ৬১৫ জন চিকিৎসক (গ্রেড-৯) কর্মরত রয়েছেন। দেখা যাচ্ছে ৫০ শতাংশের কিছু বেশি চিকিৎসকের পদ খালি রয়েছে।
শহরের মতো উপজেলায় প্রাইভেট হাসপাতালে প্র্যাকটিসের সুবিধা না থাকা, উপজেলায় জীবন যাপনের সুবিধা না থাকা, ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব, আবাসিক সংকট- এসব কারণে চিকিৎসকরা উপজেলা হাসপাতালগুলিতে অবস্থান করতে চান না। তারা নানা তদবির করে উপজেলায় বদলি ঠেকাতে চেষ্টা করেন। না পারলে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন অথবা নিকটস্থ জেলা শহর থেকে উপজেলায় গিয়ে দায়িত্ব সারেন অথচ রোগীদের সেবা দিতে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন। সরকার থেকে চিকিৎসকদের উপজেলায় অবস্থান করতে বার বার সতর্ক করা হলেও এ ব্যাপারে খুব একটা অগ্রগতি নেই। আবার তরুণ চিকিৎসকরা উপজেলায় গেলেও অনেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ছুটিতে থাকেন। গ্লোবাল হেলথ রিপোর্ট ২০২০ ভলিউম-৪ এ বাংলাদেশের উপজেলা পর্যায়ে কাজে চিকিৎসকের অনাগ্রহ নিয়ে একটা গবেষণা প্রতিবেদনও আছে। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ডা. রশিদ ই মাহবুব নিয়োগের আইন সংশোধন, চিকিৎসার যন্ত্রপাতির স্বল্পতা এসব বিষয়ে ভাবা প্রয়োজন বলে অভিমত রাখেন।
বিগত করোনাকালে বিশেষ বিসিএস থেকে চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসকদের মানসিকতার পরিবর্তনে সচেষ্ট হতে হবে। এ ব্যাপারে চিকিৎসক সংগঠনগুলিরও ভূমিকা থাকা চাই। উপজেলা হাসপতালগুলিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম প্রাপ্যতা, আবাসিক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। করোনাকালে মানুষকে যথাযথ সেবা দেবার কথা বলেছে সরকার তবে চাহিদা অনুসারে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, তাদের সুরক্ষা ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।