নিজস্ব প্রতিবেদক »
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘লালদীঘি ময়দানটি আমাদের সম্পদ। এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের। এ মাঠ ইতিহাসের অনেক ঘটনার সাক্ষী। গতকাল সোমবার দুপুর ১টায় লালদীঘি মাঠ উন্মুক্ত করার সময় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘মুসলিম হাই স্কুল চলাকালীন মাঠটি শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করবে। তবে বিদ্যালয়ের ছুটি হলে এলাকাবাসী বিকেলে হাঁটতে পারবেন। এছাড়া রাজনৈতিক ও সামাজিক কাজে এ মাঠ ব্যবহার করা যাবে। এজন্য নির্দিষ্ট ফি দিয়ে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। তবে মাঠে কোনভাবেই যানবাহন রাখা ও মেলা বসানো যাবে না।’
মাঠটির পরিচ্ছন্নতার কাজ সিটি করপোরেশন দেখবে। জেলা প্রশাসন ও সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দেখভাল করবে।
জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ’আজ (সোমবার) মাঠটি উন্মুক্ত করা হয়েছে। এটির ব্যবস্থাপনায় একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রণয়ন করা হয়েছে। কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলকে এসওপি অনুসরণ করে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হবে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জনসভার স্মৃতি ধরে রাখতে ‘নগরীর লালদীঘি মাঠ সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন’ প্রকল্পটি নান্দনিকরূপে সাজানো হয়েছে। মাঠটির দৈর্ঘ্যে ৫০ এবং ২৫ ফুট প্রস্থের একটি ছয় দফা মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মাঠের দেয়ালজুড়ে টেরাকোটার ম্যুরালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনসহ বাঙালির সব আন্দোলন-সংগ্রামের সচিত্র ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠটি উন্মুক্ত করাতেই নগরবাসীর মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে ।
জানতে চাইলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুছ বলেন, ‘নগরীর ঐতিহাসিক লালদীঘি মাঠ বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ মাঠে ছয় দফা ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই মাঠটি দীর্ঘদিন অরক্ষিত হয়ে পড়েছিল। মাঠটি সংরক্ষণ ও ছয় দফা মঞ্চ নির্মাণ করায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ।’
আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, চট্টগ্রামের রাজনীতির ইতিহাসে অনেক সংগ্রামের ঠিকানা এ ময়দান। মাঠটির সংরক্ষণ ও সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের মানুষের আশা ছিল। দেশের ঐতিহাসিক স্থান রক্ষার্থে আজ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মাঠটিকে সংস্কারের উদ্যোগ নেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর চট্টগ্রামবাসী আজ তাদের প্রিয় স্থান ফিরে পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, দেশের আন্দোলন-সংগ্রামের অন্যতম সূতিকাগার ঐতিহাসিক লালদীঘির ময়দান। দীর্ঘ বছর অবহেলিত থাকলেও এই ময়দানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছয়দফাসহ বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মৃতি স্মারক। টেরাকোটার কারুকাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এক বছর আগে কাজ শেষ হলেও উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সময়সূচি পাওয়া না যাওয়ায় মাঠের দরজা বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ড সমাবেশে সংষ্কার করা লালদীঘি ময়দান উদ্বোধন করেন।
জানা যায়, ১৭৬১ সালে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চট্টগ্রামের শাসনভার গ্রহণ করে, তখন থেকেই লালদীঘিকে কেন্দ্র করে এই শহরের কর্মচাঞ্চল্য বিস্তার লাভ করে। লালদীঘি পাড়ের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দপ্তরটি ব্রিটিশ আমলের। তখন এটি তহশিল দপ্তর ছিল। লাল রঙের সেই ভবনকে চট্টগ্রামের মানুষ ‘লালকুঠি’ নামে চিনতো। এই ভবনের পাশে ছিল ‘লালঘর’ নামে একটি কারাগার ভবন। এ দুটি ভবনের পাশে ছিল একটি পুকুর। ব্রিটিশ শাসকরা সেই পুকুরের পরিধি বড় করে সেটাকে দীঘিতে পরিণত করে। পাহাড়ি টিলার ওপর ‘লালকুঠি’ এবং ‘লালঘর’। আর পাশের দীঘিটির নাম তাই স্বাভাবিকভাবে হয়ে গেল লালদীঘি। তার পাশের মাঠটিকেও ‘লালদীঘি ময়দান’ নামে চিনতে শুরু করল সবাই। তাছাড়া ১৯৬৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি লালদীঘি ময়দানে প্রথম জনতার সামনে ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।