উন্নয়ন প্রকল্পে হুমকিতে পরিবেশ!

SAMSUNG CAMERA PICTURES

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস

গতানুগতিক ইআইএ রিপোর্ট, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ : বাপা

ভূঁইয়া নজরুল »

হালদা নদীর পানি পরিশোধন করে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে পানি নেয়ার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। পরিবেশের প্রভাবজনিত সমীক্ষা রিপোর্টেও (ইআইএ) হালদা নদী থেকে পানি নিলে সমস্যা হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পরিবেশবাদীদের চাপের মুখে এই রিপোর্ট ভুল প্রমাণিত হয় এবং পরবর্তীতে এই প্রকল্প থেকে সরে আসা হয়। শুধু হালদা নয়, সরকারের অনেক মেগা প্রকল্প এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক প্রকল্পের কারণেও হুমকির মুখে পরিবেশ।
এসব প্রকল্পের কারণে উন্নয়ন ও পরিবেশ যেনো সাংঘর্ষিকে রূপ নিচ্ছে। কিন্তু টেকসই উন্নয়ন বলে একটি কথা আছে। সেই টেকসই উন্নয়নের চর্চা করছি না উল্লেখ করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সেক্রেটারি শরীফ জামিল বলেন, ‘আধুনিক বিশ্বে উন্নয়ন ও পরিবেশ সমান্তরালে চলে, সাংঘর্ষিক নয়। কিন্তু আমরা প্রকল্প অনুমোদনের আগেই কাজ শুরু করে দেই এবং পরবর্তীতে অনুমোদন নেই। এতে পরিবেশের যা ক্ষতি হওয়ার তা আগেই হয়ে যায়।’

ইআইএ রিপোর্ট যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা পেতো উল্লেখ করে শরীফ জামিল বলেন, ‘ইআইএ রিপোর্টগুলো গতানুগতিক হয়ে থাকে। বাস্তবের সাথে অনেক ক্ষেত্রেই সামঞ্জস্য থাকে না। আর থাকে না বলেই প্রকল্পের পর পরিবেশগত বিপর্যয় মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হয়।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণীবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ইআইএ রিপোর্টগুলো যথাযথ না হওয়ার বাস্তব উদাহরণ হালদা নদী থেকে পানি মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে নেয়ার প্রকল্পটি। এতো বিশাল একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে কিন্তু পানির সংস্থান বিবেচনায় আনা হয়নি। আমাদের দাবির মুখে তা পুনরায় ইআইএ করা হলে তা পরিবেশের জন্য বাস্তবসম্মত হবে না বলে রিপোর্ট দেয়া হয়।
পরিবেশের কথা বিবেচনায় না এনে প্রকল্প নেয়ায় এখন সিআরবি থেকে হাসপাতাল প্রকল্প সরিয়ে নিতে হচ্ছে কুমিরায়। চট্টগ্রাম শহরের অভ্যন্তরে ফুসফুস খ্যাত এই এলাকায় একটি হাসপাতাল করলে যে পরিবেশের ক্ষতি হবে তা কি তাদের মাথায় ছিল না?

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সমাজ বিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বলেন, ‘সিআরবি এলাকায় হাজারো জীববৈচিত্র্য রয়েছে। এই এলাকাটি কালচারাল হেরিটেজ জোন হিসেবে স্বীকৃত। এখানে কিভাবে হাসপাতাল নেয়ার প্রকল্প নেয়া হয়েছিল? চট্টগ্রামের গণমানুষের দাবির মুখে এখন সরকার তা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।’ এদিকে চট্টগ্রাম শহরের আরেকটি উন্মুক্ত উদ্যান ছিল বিপ্লব উদ্যান। কিন্তু অপরিকল্পিত উন্নয়নে সেই উদ্যানটি এখন কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। বিনষ্ট হয়েছে নগর পরিবেশ।

এদিকে বাপা সম্প্রতি মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কয়লা ভিত্তিক এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের বাতাস দূষিত হতে পারে এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।

এসব প্রকল্পের অনুমোদন কিভাবে হয়?

যেকোনো প্রকল্পের পরিবেশগত সমীক্ষা যাচাই করে অনুমোদন দিয়ে থাকে পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় প্রকল্প আগেই নেয়া হয়ে গেছে পরিবেশের অনুমোদন নেয়া হয় পড়ে। তবে এখন বিধি নিষেধের মধ্যে অনেক কঠোরতা আনা হয়েছে। আবার সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো একনেক থেকে অনুমোদন পায়। সেগুলো আবার ইআইএ রিপোর্টের ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়া হয়ে থাকে। এবিষয়ে কথা হয় সরকারের প্ল্যানিং মন্ত্রণালয়ের এনইসি-একনেক ও সমন্বয় অনুবিভাগের যুগ্ম প্রধান মোহাম্মদ ইউনুছ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, সরকারের যেকোনো প্রকল্প প্ল্যানিং বিভাগের আওতাধীন কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান নামে একটি আরেকটি বিভাগ রয়েছে। সেই বিভাগে ১৫টি শাখা রয়েছে। সেই শাখা থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরই তা একনেকে অনুমোদন পেয়ে থাকে। তাই পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়।’
ইউনুছ মিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী জানতে চাওয়া হয় কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের বন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উইংয়ের যুগ্ম প্রধান মফিজুর রহমানের কাছে। তিনি বলেন, ‘যেসব প্রকল্প লাল ক্যাটাগরির হয়ে থাকে সেগুলো ইআইএ রিপোর্ট বিশ্লেষণ করি। সেই রিপোর্টেই উঠে আসে তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক কিনা। ইআইএ রিপোর্ট যাচাই করে প্রকল্পটি ছাড় করে থাকি।’

এদিকে পরিবেশবাদীদের মতে, যথাযথভাবে ইআইএ রিপোর্ট তৈরি না হওয়া এবং বাস্তব অবস্থা বিশ্লেষণ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয় না বলেই আজ বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। ধ্বংস হচ্ছে জলজ ও স্থলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য।
উল্লেখ্য, আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘একটাই পৃথিবী: পৃথিবীর ঐকতানে টেকসই জীবন’। দিবসটি উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর বিতর্ক প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সেমিনারসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।