চট্টগ্রাম অঞ্চলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সাথে সাথে শোভন কর্মসংস্থানের ওপর নজর দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এ দাবি উঠে এসেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-এর পক্ষ থেকে আয়োজিত জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা শীর্ষক আঞ্চলিক সংলাপে।
এতে বলা হয় শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, অবকাঠামো ইত্যাদি নানা দিকে গুণগতমানের দিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে নজর বাড়াতে হবে।
গুণগত শিক্ষাব্যবস্থা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীবান্ধব কর্মসংস্থান, পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলা, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে প্রশিক্ষণের অভাব ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংলাপে আলোচনা হয়।
ইয়ং পাওয়ার ইন স্যোশাল অ্যাকশান (ইপসা), চট্টগ্রাম এবং জাতিসংঘ ডেমোক্রেসি ফান্ড (ইউএনডিইএফ)-এর সহযোগিতায় সিপিডি গতকাল শনিবার নগরীর একটি হোটেলে এ সংলাপ আয়োজন করে।
সংলাপে আলোচকরা বলেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহারের মাধ্যমে তাদের উন্নয়নের অঙ্গীকার করে। ইশতেহারে বর্ণিত অঙ্গীকারসমূহ যে কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এটিকে দল ও ভোটারদের মাঝে একটি লিখিত চুক্তি বলে ধরে নেওয়া যায়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ প্রকাশ করে। সংলাপে নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকারসমূহ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হয়।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, গত পাঁচ দশকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসসহ বিভিন্ন সূচকে উন্নতি হয়েছে। বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহার তৈরিতে অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু ইশতেহার কতটুকু বাস্তবায়িত হল, জনগণের সাথে রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ততা কতটুকু এবং জনগণের ইশতেহার তৈরিতে দায়িত্ব ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের নজর দেওয়া আবশ্যক।
ইপসার প্রধান নির্বাহী মো. আরিফুর রহমান সংলাপে সূচনা বক্তব্যে বলেন, উন্নতির সুফল সকল শ্রেণির মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সিপিডির সংলাপ ও যোগাযোগ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বিভিন্ন সূচকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের অবস্থা তুলে ধরেন। এছাড়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা বিষয়ে বিভিন্ন অঙ্গীকার এবং অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, এই সংলাপের আগে বাংলাদেশের ৯০টি স্থানে মুক্ত আলোচনা করা হয়, যেখানে প্রায় ৯১৮ জন উপস্থিত ছিলেন। তার উপস্থাপনায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের ইশতেহার সম্পর্কে মতামত এবং পরামর্শও তুলে ধরা হয়।
সংলাপে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার সভাপতি ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত বলেন- জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয় না।
আগ্রাবাদ মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি ড. আনোয়ারা আলম বলেন শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং পরীক্ষামুখী শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে না যার ফলে শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগে পড়ছে।
ঘাসফুল চেয়ারম্যান ড. মনজুর উল আমিন চৌধুরী বলেন, বৈষম্যের দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজকে দেখা উচিত। উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। তিনি আরো বলেন উন্নয়নের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি উপাচার্য ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুণগতমানের দিকটিকে অবশ্যই দেখতে হবে, তা না হলে গুটিকয়েক মানুষের জন্য উন্নয়নের সুবিধা আটকে থাকবে।
সংলাপে দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমা হারুন লুবনা বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকারের সাথে জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। অনেক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে এবং তা এগিয়ে যাচ্ছে।
সংলাপে বিশেষ অতিথি সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, জনগণকেও এসব ব্যাপারে আরো সচেতন করে তুলতে হবে। তিনি গঠনমূলক সমালোচনার উপর জোর দেন।
সংলাপে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, উদ্যোক্তা, পেশাজীবী এবং গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি