স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য স্বীকৃতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের এই অনন্য অর্জন উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে যারা আজকের বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্বীকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১২ বছর ধরে সরকার পরিচালনায় পরিশ্রম, পরিকল্পনা এবং আপামর জনসাধারণের শ্রম ও ত্যাগের ফলে এ অর্জন সম্ভব করেছে। তিনি বর্তমান বাংলাদেশকে বদলে যাওয়া অন্য এক বাংলাদেশ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত ও পরিসংখ্যান দিয়ে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরেন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বিশ্বে বাংলাদেশ প্রত্যয়ী ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ অর্জনকে সুসংহত ও টেকসই করার ওপর তিনি জোর দেন। এ লক্ষ্যে তাঁর সরকারের নেওয়া ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, মেগা প্রকল্প, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক এবং আইটি ভিলেজ নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপদযাপনের মুহূর্তে জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের জন্য একটি শুভ সংবাদ যা জাতিকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। যে ৩টি বিষয় উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতির অন্যতম শর্ত যেমন মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা-এসব বিষয়ের সবগুলিতে সাফল্যসূচক ২ বছর আগেই বাংলাদেশ অর্জন করেছে।
এই স্বীকৃতি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নত দেশে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সম্ভাবনাও চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৩০ সালে এসডিজি অর্জন ও ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তাঁর ভিশন ব্যক্ত করেছেন। এখন সময়ে এসেছে আমাদের অর্থনীতি, সামাজিক, রাজনৈতিক সকল তৎপরতাকে সেই লক্ষ্য অভিমুখে এগিয়ে যাওয়ার বৃহৎ কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের।
‘উন্নয়নশীল বাংলাদেশ’ এই অনুভূতি মনস্তাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশের মানুষকে ইতিবাচক অগ্রগতির অনুপ্রেরণা সঞ্চারী। ‘উন্নয়নশীল’ উত্তরণে যে সময় পাওয়া যাবে তার সর্বোত্তম ব্যবহার করে কৃষি, শিল্প, প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সকল ক্ষেত্রে আধুনিকায়ন ঘটিয়ে আমাদের উদ্যোক্তা ও সরকারকে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে এগোতে হবে। বিশেষজ্ঞরা শ্রমিকের দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা উৎপাদন বহুমুখিকরণ, রপ্তানি বৈচিত্র্য, এফটিএ ও আরটিএর সুযোগ নেওয়া, শুল্কমুক্ত সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে শর্তাদি পূরণÑএ সবের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বিশাল অংশ আমাদের অর্থনীতিতে সম্পদ হিসেবে বিবেচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটলে সহজ শর্তে ঋণ ও সাহায্য পাওয়া যাবে না। রপ্তানিতে শুল্ক বাড়বে। বৈদেশিক ঋণের অংশ কমিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন, জাতীয় রাজস্ব আদায়ের প্রতি অধিক মনোযোগ এবং রপ্তানি বহুমুখিকরণ করতে পারলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষিত হবে; দেশীয় কর্মসংস্থান ও বিদেশের শ্রম বাজার সম্প্রসারণ এসডিজির সময়কালে ব্যাপক হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। অর্থনৈতিক সুশাসন ও শৃঙ্খলা-সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ইনস্টিটিউশনগুলো উন্নত করা, দুর্নীতি রোধ এসব বিষয়গুলি আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সহায়ক বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
আমরা মনে করি এখন থেকে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কূটনীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, এলডিসি থেকে উত্তরণে কৌশলপত্র প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অধিদফতরের সমন্বয়ও প্রয়োজন। দেশি বিদেশি বিনিয়োগের আদর্শ কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে বাংলাদেশকে।
মতামত সম্পাদকীয়