স্থলের সবচেয়ে বড় প্রাণী হাতি। পৃথিবীতে দুই প্রজাতির হাতি আছে- এশীয় ও আফ্রিকান হাতি। এশীয় হাতির চেয়ে আফ্রিকান হাতি আকারে বেশ বড়।
বাংলাদেশে টেকনাফের বনাঞ্চল, বান্দরবানের ঘুমধুম, কক্সবাজারের ইনানী, শেরপুরের ঝিনাইগাতীসহ আরও বেশ কিছু এলাকায় হাতির বিচরণ রয়েছে। মাঝে মাঝে সুনামগঞ্জেও হাতির দেখা পাওয়া যায়। হাতি সমাজবদ্ধ প্রাণী। এরা দলবেঁধে চলাচল করে। এরা মাইগ্রেটরি প্রাণী। বাংলাদেশ থেকে ভারত, মিয়ানমারে যাতায়াত করে। আবার ওসব দেশ থেকেও বাংলাদেশে আসে।
হাতি মূলত পাহাড়ি বনের বাসিন্দা। বছরের অধিকাংশ সময় এরা পাহাড়ে থাকে। হাতির বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণ পানি দরকার হয়। প্রতিদিন এদের ৮০ থেকে ১২০ লিটার পানি প্রয়োজন। বর্ষাকালে পাহাড়ে পর্যাপ্ত পানি এবং গাছপালা থাকার কারণে ওই সময় হাতি পাহাড়ে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
কিন্তু শীতকালে যখন বৃষ্টিপাত হয় না, পাহাড়ে জমে থাকা পানি শুকিয়ে যায়, তখন পানি পান করার জন্য হাতিরা নিচে, সমতল ভূমিতে চলে আসে। সমতলের মানুষ চাষাবাদ করেছে, ঘরবাড়ি করেছে- এবং সেটা করেছে হাতিদের চলাচলের রাস্তায় বা করিডোরে। হাতিরা বংশপরম্পরায় এসব করিডোর ব্যবহার করত। যখনই মানুষ এসব করিডোরে কোনো স্থাপনা বা চাষাবাদ করেছে, তখনই হাতিদের চলাচলের রাস্তা ও বিচরণক্ষেত্র নষ্ট হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু টানেল দেশের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সৃষ্টি করেছে। ভবিষ্যতে দেশের আমদানি-রপ্তানি ক্ষেত্রেও এই টানেল বড় ভূমিকা রাখবে। তবে টানেলের আনোয়ারা প্রান্তের সাড়ে তিন কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়কে মানুষ ও যান চলাচলের জন্য তিনটি আন্ডারপাস করা হয়েছে তবে যে সমস্ত পথ দিয়ে হাতি চলাচল করে সে সমস্ত পথে কোনো এলিফ্যান্টপাস বা রুট করা হয়নি। এভাবে হাতি চলাচলের পথ বন্ধ করলে হাতিগুলো খাদ্যের অভাবে লোকালয়ে হামলা করতে পারে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয়রা জানান পাহাড় নিধন বনায়ন ধ্বংস করার কারণে হাতিগুলো বিভিন্ন জায়গায় চলে যায় পরবর্তীতে কয়েক বছর আগে হাতিগুলো তাদের পুরানো বাসস্থান দেয়াং পাহাড়ের আশেপাশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। হাতিরা খাবারের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় বিচরণ করে। আমরা যদি হাতিগুলোকে বিরক্ত করি, চলাচলে বাধা সৃষ্টি করি তাহলে হাতিগুলো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে মানুষের ক্ষতিসাধন করবে।
কথা হলো এখানে হাতির চলাচল আছে সেটা জানা সত্ত্বেও পরিকল্পনাকারীরা হাতি চলাচলের পথ রাখল না কেন? চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে হাতি চলাচলের জন্য ওভারপাস রাখা হলেও আনোয়ারায় সড়ক নির্মাণের সময়ে তা কেন মাথায় রাখা হলো না।
প্রধানমন্ত্রী সবসময় পরিবেশের ক্ষতি না করে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর সে পরামর্শ বা নির্দেশনা কেন মানা হলো না তার ব্যাখ্যা কে দেবে?
এ মুহূর্তের সংবাদ