নিজস্ব প্রতিনিধি, রামগড় :
আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ বাড়িয়ে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে করতে খাগড়াছড়ির রামগড় মহামুনি এলাকায় বহুপ্রতিক্ষিত রামগড়-সাবরুম স্থল বন্দর স্থাপনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর গত কয়েক মাস রাত-দিন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা শ্রম দিয়েছেন এর পেছনে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন দু-দেশের জনগণ।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস ভারতীয় হাই-কমিশনারকে উদ্ধৃত করে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যৌথভাবে সেতু উদ্বোধনের কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে উভয় দেশের হাই অফিসিয়েলস’রা বেশ কয়েকবার ঘুরে গেছেন স্থলবন্দর এলাকা। চলতি মাসের ৬ জানুয়ারি একটি জাইকা (জাপানি উন্নয়ন সংস্থা) প্রতিনিধি দল আসেন। তারা মৈত্রী সেতুসহ সড়কে নির্মিয়মাণ সেতু-কালভার্ট পরিদর্শন করেন। ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ আসেন ত্রিপুরায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাই-কমিশনার মো. জাবেদ হোসেন।
তিনি ওই সময় সাংবাদিকদের বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ সেতু উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, খাগড়াছড়ির রামগড়ে নির্মীয়মাণ স্থলবন্দর বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ বাড়াবে। সম্প্রসারিত হবে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য। এটি হবে দেশের ২৩তম পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দর। এখানকার সার্বিক কার্যক্রমে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীর প্রত্যাশা করছেন এ অঞ্চলের মানুষ। সমাজের উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা রামগড় স্থল বন্দর এই অঞ্চলের অধিবাসীদের অর্থনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি সর্বত্র কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করবে, বৈদেশিক বাণিজ্যে তথা পণ্য ও সেবার অবাধ প্রবাহ, বিনিয়োগে আন্তর্জাতিককরণ, বাজার সম্প্রসারণ ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে এগিয়ে যাবে দেশ, সফল কানেক্টিভিটির মাধ্যমে যুক্ত হবে সমৃদ্ধির এক নতুন অধ্যায়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ আয়োজিত বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড এক্সপোর্ট ফেয়ার (বিআইটিএফ) উদ্বোধনকালে গত বছরের ২৭ অক্টোবর রোববার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরকে পূর্ব ভারতের কমপক্ষে পাঁচ কোটি মানুষ ব্যবহার করলে প্রচুর রাজস্ব আয় হবে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বাড়বে। উত্তর-পূর্ব ভারতের পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য কলকাতা বন্দরে যেতে ১২শ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব অনেক কম।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ‘নেইবারহুড ফাস্ট’ ও ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’র প্রভার বিষয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বীজ নিহিত আছে প্রতিবেশী বাংলাদেশের সহযোগিতার ওপরই। ‘সেভেন সিস্টার্স’ হিসাবে পরিচিত এই অঞ্চলের স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ১ সেপ্টেম্বর ২০ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব স্থলবন্দর এলাকা পরিদর্শন করে কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের তাগাদা দিয়েছিলেন।
রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী ও রামগড় বাজারের ব্যবসায়ী তাপস বিশ্বাসের ভাষ্যমতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপনে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণে ভারত দীর্ঘদিন ধরেই সচেষ্ট ছিল। এটা সম্ভব হওয়ায় ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম, মনিপুর মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুনাচল (সেভেন সিস্টার্স) চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন দুদেশেরই ব্যবসায়ীরা। খাগড়াছড়িসহ চট্রগ্রামের ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই রামগড় স্থল বন্দরের অগ্রগতি বিষয়ে খোঁজ খবর রাখছেন, সরেজমিন পরিদর্শনও করেছেন অনেকে। রামগড় স্থল বন্দর চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রেই অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে, পুরো এলাকার চেহারাটাই পাল্টে যাবে বলে মনে করেন তারা।
খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরী বলেন, রামগড়েই চালু হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন ধীরগতিতে কাজ চললেও সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশ উভয় পক্ষ ত্বরিত গতিতে স্থলবন্দর বাস্তবায়নের কাজ শুরু করায় ব্যবসায়ীসহ সকল মহল আশার আলো দেখছেন। সব মিলিয়ে রামগড় স্থল বন্দর পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি বিপুল জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে যে, বিশাল ভূমিকা রাখবে নিশ্চিতভাবেই তা বলা যায়। আর যোগাযোগের ক্ষেত্রে সূচিত হবে এক নতুন দিগন্তের। আঞ্চলিক গণ্ডি ছাপিয়ে এ যেন বিশ্বব্যাপী সেতুবন্ধনের এক পূর্বাভাস।
এ মুহূর্তের সংবাদ