সুপ্রভাত ডেস্ক »
উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তিন প্রকল্প। প্রকল্প তিনটি হচ্ছে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ১৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ দশমিক ৬শ কিলোমিটার দীর্ঘ বাকলিয়া অ্যাক্সেস রোড এবং ৩৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড। আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্প তিনটির উদ্বোধন করতে পারেন বলে মনে করছেন সিডিএ কর্মকর্তারা।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস্ বলেন, ‘সিডিএ’র তিনটি প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত। এর মধ্যে বাকলিয়া অ্যাক্সেস রোড এবং ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এ দুটি সড়ক চট্টগ্রাম নগরীর মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থাকে অনেক সহজতর করেছে। এ ছাড়া লালখান বাজার থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান আছে। এটিও উদ্বোধন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে এসে টানেল উদ্বোধন করবেন। একই সময়ে সিডিএ’র এ তিনটি প্রকল্পও উদ্বোধন করা হতে পারে।’
বাকলিয়া অ্যাক্সেস রোড
নগরীর চন্দনপুরা থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত ১ দশমিক ৬শ কিলোমিটার দীর্ঘ বাকলিয়া অ্যাক্সেস রোড। ইতোমধ্যে এ সড়কের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। চলছে যানবাহনও। ২২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট প্রশস্ত সড়কটি চার লেনে নির্মিত হয়েছে। সড়কের দু’পাশে ড্রেন কাম ফুটপাত রয়েছে। উভয় পাশের ২০টি সংযোগ সড়কের সঙ্গে রাস্তাটিকে সংযুক্ত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের নভেম্বরে। বাকলিয়া থানার পাশ থেকে শুরু হওয়া সড়কটির কাজ ২০২০ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাকলিয়া ডিসি রোডে মৌসুমি আবাসিক এলাকায় সিডিএ’র অনুমোদন নিয়ে গড়ে ওঠা ১০তলা একটি ভবন এ সড়ক নির্মাণে জটিলতা সৃষ্টি করে। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের অনুমতিতে এ জটিলতা কাটিয়ে সম্পন্ন করা হয় সড়ক নির্মাণের কাজ।
প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকৌশলী কাজী কাদের নেওয়াজ টিপু বলেন, ‘জলাবদ্ধতার বিষয়টি মাথায় রেখে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কটি স্থিত জমি থেকে ৩ ফুট উঁচু করা হয়েছে। প্রশস্ত ড্রেনের মাধ্যমে পানির সহজ নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে অতি বৃষ্টিতেও সড়কটি পানিতে তলিয়ে যাবে না। এ ছাড়া, মূল সড়ক দুটোর সংযুক্ত অংশেও জলাবদ্ধতার আশঙ্কা নেই।’
তিনি বলেন,সড়কটি নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর ইত্যাদি এলাকার যানবাহনের চাপ অনেক কমিয়ে আনবে। এ ছাড়া, কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের প্রধান গন্তব্য চকবাজার, আন্দরকিল্লা, কোর্ট বিল্ডিংয়ে যাতায়াতকে অত্যন্ত সহজ করে দেবে।
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের অগ্রগতি প্রায় ৮২ শতাংশ। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন বিভিন্ন স্থানে ওঠা-নামার জন্য ১৪টি র্যাম্প সংযোজন করার কথা। এখন পর্যন্ত সেগুলোর নির্মাণকাজও শুরু হয়নি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা।
চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। প্রকল্পের অধীনে ৩৯০টি পিলার, ৪০০ গার্ডার থাকার কথা। এর মধ্যে ৩৮৯টি পিলার নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। একটি পিলারের কাজ বাকি আছে। ৩৯০টি গার্ডার বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ চলমান আছে।’
এদিকে, চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি প্রয়াত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার প্রস্তাব করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ২৪ আগস্ট সিডিএ ভবনে আয়োজিত ৪৫৮তম বোর্ড সভায় এ প্রস্তাব করা হয়। সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সিডিএ সূত্র জানায়, নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি।
দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এই দফায় সময় বেড়েছে এক বছর। প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা করা হয়। সিডিএ’র এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র্যাঙ্কিন।
প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের, ৫৪ ফুট প্রশস্ত এবং চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১৪টি র্যাম্প। এর মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি র্যাম্প থাকবে।
ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড
প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলছে যানবাহন। ৩৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
২০১৩ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় ‘ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোড’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ওই সময় প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৭২ কোটি টাকা। পরে দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ এবং ব্যয় বেড়েছে। বিশেষ করে, এশিয়ান উইম্যান ইউনিভার্সিটির সঙ্গে সড়ক নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় পুরো প্রকল্পটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে আগে নির্মিত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক ওই ইউনিভার্সিটিকে হস্তান্তর করে নতুন করে লুপ রোড নির্মাণসহ ডিজাইন পাল্টে সড়কটি নির্মাণ করা হয়। এতে কয়েক দফায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫৩ কোটি টাকায়।
সিডিএ কর্মকর্তারা জানান, এ সড়কটিতে যানবাহন চলাচলে টোল নির্ধারণ করা হবে। কবে থেকে এ সড়ক টোলের আওতায় আসবে তা নিয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত হবে।