নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা এলাকায় একটি মাতৃসদন কাম জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণে সম্প্রতি সিডিএ কর্তৃক উচ্ছেদকৃত জায়গা বরাদ্দ দেয়ার জন্য সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
গতকাল বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কনফারেন্স রুমে মতবিনিময়কালে এ অনুরোধ জানান তিনি।
মতবিনিময়ে সুজন চট্টগ্রামের বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সিডিএ চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে আউটার সিটি রিং রোড, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগাপ্রকল্পগুলো চট্টগ্রামের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে সিডিএ নগরীর যানজট নিরসনে অবদান রেখেছে যা প্রশংসনীয়। তবে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে সিডিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করেন সুজন।
তিনি বলেন, নগরীর অতি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর-পতেঙ্গা এলাকায় লাখ লাখ অধিবাসীর জন্য নেই কোন মাতৃসদন কিংবা জেনারেল হাসপাতাল। একটি হাসপাতালের অভাবে এ এলাকার মানুষের দুঃখ দুর্দশা চরমে।
এ এলাকায় বহু ভারী শিল্প গড়ে উঠেছে। যেখানে জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। দুটি ইপিজেডে কাজ করছে লক্ষ লক্ষ নারী শ্রমিক। তাই এ এলাকায় একটি মাতৃসদন কাম জেনারেল হাসপাতাল অতীব প্রয়োজন।
সুজন বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রশাসক থাকাকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবরে একখানা উপানুষ্ঠানিক পত্র প্রেরণ করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ওই এলাকায় একটি হাসপাতাল নির্মাণে সম্মতি দেন। সম্প্রতি বন্দর এলাকায় সিডিএ’র একটি বিশাল জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া জায়গাটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বরাদ্দ প্রদান করলে একটি মাতৃসদন কাম জেনারেল হাসপাতাল সহসাই নির্মিত হতে পারে। এ ব্যাপারে সিডিএ চেয়ারম্যানকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন চট্টগ্রামের জনগণকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী সিডিএ’র মাধ্যমে চট্টগ্রামের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দেন। বর্তমানে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে। বর্ষা এলেই জনগণ জলাবদ্ধতায় আতংকিত থাকে বিধায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই খালের ভিতর থেকে সকল মাটি ও আবর্জনা অপসারণ এবং খালের মুখের প্রতিবন্ধকতা দূর করার অনুরোধ জানান। বিশেষত মুরাদপুর, ২ নম্বর গেইট, বহদ্দারহাট, চকবাজার এবং চাকতাই এলাকার অবশিষ্ট কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে সিডিএ চেয়ারম্যানের নির্দেশনা কামনা করেন তিনি।
সুজন বলেন, আউটার সিটি রিং রোড সংলগ্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণীয় স্থান সি বীচ অবস্থিত। এর সাথেই রয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি। স্বাভাবিকভাবেই বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে নয়নাভিরাম এ জায়গায় ভ্রমণপিপাসুরা বিনোদনের জন্য দল বেঁধে ছুটে যায়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে সৌন্দর্যময় এ প্রকল্পগুলো দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসলেও সেখানে এসে পর্যটকদের নিরাশ হতে হয়। আকর্ষণীয় সি বীচের সৌন্দর্য ম্লান করে দিয়েছে এলোমেলো দোকান, নোংরা আবর্জনা এবং ভাসমান হকারের হাঁকডাক। গড়ে উঠেনি মানসম্পন্ন কোন রেস্টুরেন্ট কিংবা শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা। বিপুলসংখ্যক পর্যটকদের জন্য নেই কোন শৌচাগার কিংবা বিশ্রামাগার। ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকগণ আরো বিপত্তিতে পড়েন। অথচ সিডিএ চাইলে নিজস্ব অর্থায়নে মনোরম সুন্দর জায়গাটিকে একটি অনন্য আকর্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি শৌচাগার নির্মাণের মধ্য দিয়ে পর্যটকদের দুর্ভোগ লাঘব করতে পারে। এ ব্যাপারে দ্রুত প্রকল্প গ্রহণ করার অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি বলেন, নগরীর ভিতরে অবস্থানরত কন্টেইনার ইয়ার্ডগুলো শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে অচল করে দিয়েছে। এসব কন্টেইনার ইয়ার্ডের ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান নগরীর যানজট এবং দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। বন্দরের উপদেষ্টা কমিটির সভায় কন্টেইনার ইয়ার্ডগুলো বন্দরের ২০ কিমি বাইরে স্থানান্তরের প্রস্তাবনা থাকলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সিডিএকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। প্রতিদিন বিপুল বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ ভারী যানবাহন নগরীতে প্রবেশ করে। এসব যানবাহনের চাপে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো যানজটে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এতে কর্মঘণ্টার অপচয় হয় শ্রমজীবী মানুষের। এ থেকে উত্তরণে নগরীর উত্তরে দুটি আধুনিক বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সিডিএ চেয়ারম্যানের প্রতি অনুরোধ জানান ।
সুজন আরো বলেন- নগরীতে শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠের বড়ই অভাব। বাণিজ্যিকরণের ফাঁদে পড়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে নগরীর অনেক মাঠ। ফলে মোবাইল গেম নিয়েই ব্যস্ত থাকছে আগামী প্রজন্ম। মাঠে খেলতে না পেরে বেশিরভাগ সময় তাদেরকে ঘরবন্দি হয়ে কাটাতে হয়। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। তাই উন্নয়নের পাশাপাশি আগামী প্রজন্মের জন্য নগরীতে কয়েকটি খেলার মাঠ তৈরি করার উদ্যোগ নিতে সিডিএ চেয়ারম্যানের প্রতি আহ্বান জানান।
সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ চসিক সাবেক প্রশাসক সুজনের বক্তব্য শোনেন। তিনি প্রস্তাবনাগুলোর সাথে সহমত পোষণ করেন। তিনি বন্দর-পতেঙ্গা এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন এবং উদ্ধার জায়গা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার না করে হাসপাতাল নির্মাণে বরাদ্দ প্রদানে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
তিনি আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ সমাপ্তের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে বলে নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেন। পাশাপাশি পতেঙ্গা সি বীচে গণশৌচাগার নির্মাণে পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
বাস ও ট্রাক টার্মিনালের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দেন। কন্টেইনার ইয়ার্ড শহরের বাইরে স্থানান্তর বিষয়ে বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাশ, উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ আবু ইসা আনসারী, নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ, আব্দুর রহমান মিয়া, সদস্যসচিব মো. হোসেন, সাহেদ বশর, মনিরুল হক মুন্না প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি