অনুবাদ : রানাকুমার সিংহ :
উত্তর আমেরিকান দেশটির দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের শুকনো মরুভূমিতে, কাহিল্লান ভারতীয় উপজাতির লোকেরা বাস করে এবং তাদের ঠিক উত্তরে, দূরে পর্বতের খুব উঁচু পরিসীমা ছিল যাকে এখন সানবার্নার্ডিনো পর্বতমালা বলে। এই পর্বতে আরোহণ করতে সক্ষম হওয়া একটি দুর্দান্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসাবে বিবেচিত হতো এবং গ্রামের সমস্ত অল্প বয়স্ক ছেলেরা যখন তাদের বয়স যথেষ্ট হতো তখন তারা পর্বত জয় করার অপেক্ষায় থাকতো।
এক রাতে, বছরের শেষ মওসুমে গ্রামপ্রধান যাকে চিফ বলা হয়, সমস্ত ছেলেদের এক সাথে ডেকে বললেন; ‘এখন, ছেলেরা, তোমরা এই চ্যালেঞ্জটি মেনে নেওয়ার উপযুক্ত বয়সে রয়েছো এবং তোমরা আগামীকাল থেকে পর্বত জয়ের চেষ্টা করতে পারো। আমার আশীর্বাদ নিয়ে এই পর্বতটিতে আরোহণ করো। প্রাতঃরাশের ঠিক পরেই যাত্রা শুরু করো এবং তোমরা প্রত্যেকেই যতটা সম্ভব পার হয়ে যাবে এবং ক্লান্ত হয়ে গেলে ফিরে এসো।’ ছেলেরা এ কথা শুনে এত উত্তেজিত ছিল যে তারা রাতে খুব কমই ঘুমাতে পারলো।
পরের দিন সকালে, তারা সবাই চলে গেল। আশা এবং স্বপ্নে পরিপূর্ণ সকলে। প্রত্যেকের অনুভূতি এক, যে সে অবশ্যই শীর্ষে পৌঁছে যেতে পারে।
শীঘ্রই একটি মোটা–গাট্টা ছেলে ধীরে ধীরে ফিরে আসে। ফোঁপাতে ফোঁপাতে ঘামে জবুথবু হয়ে। সে যখন তার প্রধানের সামনে দাঁড়ালো, তখন তিনি দেখলেন, ছেলেটা এক টুকরো সবুজ বিভারটেল ক্যাকটাস ধরে রেখেছে। অবিশ্বাসে মুচকি হেসে বললেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছতে পারেনি। বাস্তবে তুমি প্রান্তর পেরিয়ে এমনকি আরোহণ শুরুও করোনি।’ এক ঘণ্টা কেটে গেল। তারপরে আর একটি ছেলে ব্ল্যাকসেজ ব্রাশ নিয়ে এলো। চিফ বললেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি তুমি পাহাড়ের পাদদেশে পৌঁছেছো, তবে তুমি আরোহণ শুরু করোনি।’
আর এক ঘণ্টা কেটে গেল, এবং তৃতীয় ছেলেটি ফিরে এলো। সে একটি তরুণ কটনউড চারা ধরেছিলো। চিফ বললেন, ‘ভালো কাজ, তুমি ঝর্ণা পর্যন্ত উঠেছিলে! খুব ভালো!’
এরপর কিছুটা দীর্ঘ অপেক্ষা। একটি বালক এলো কিছু বা কর্থনের অংশ নিয়ে। চিফ তা দেখে মুচকি হেসে বললেন, ‘তুমি আসলে আরোহণ করছিলে! আমি দেখতে পাচ্ছি এখন পর্যন্ত তুমিই প্রথম রক–স্লাইডে এসেছিলে। তুমি কঠোর পরিশ্রমী ছেলে’। পরে বিকেলে, একটি ছেলে ধূপ সিডার ফ্রন্ড নিয়ে এলো। ‘ভাল হয়েছে, আমার ছেলে,’ চিফ বললেন। ‘তুমি পর্বতের অর্ধেক জয় করেছো! তুমি পাহাড়ের হৃদয়টি দেখেছো। খুব ভালো কাজ।’
তার এক ঘণ্টা পরে, পন্ডেরোসা পাইনের একটি শাখা নিয়ে একজন এলো এবং চিফ বললেন, ‘ভালো কাজ, তুমি তৃতীয় লাইফ জোনে গিয়েছিলে। দেখে মনে হচ্ছে তুমি তিন চতুর্থাংশ জয় করেছো। চেষ্টা করো, পরের বছর তুমি নিঃসন্দেহে শীর্ষে পৌঁছে যাবে!’
আলো কমে আসছিলো। চিফ কিছুটা চিন্তায় পড়লেন। পর্বতমালাকে কাটিয়ে ওঠার জন্য অনেক সমস্যা ছিল এবং তার শেষ ছেলেটি তখনও শিবিরের বাইরে ছিল। গ্রিজলি ভালুক কি তাকে আক্রমণ করতে পারে? বাহতে পারে সে কোথাও লম্বা একটা পাথর থেকে পড়ে গেছে। হয়তো সে পথ হারিয়ে ফেলেছিল, বা জলের বাইরে চলে গেছে।
ঠিক যখন ছেলেটির সন্ধানের জন্য চিফ একটি অনুসন্ধান দল প্রেরণ করতে যাচ্ছিলেন তখনই ছেলেটি ফিরে এলো। ছেলেটি মহৎ চরিত্রের লম্বা ও জমকালো ছিলো। সে চিফের কাছে গিয়ে হাত বাড়ালো। হাত দুটো খালি ছিলো, তবে তার মুখটি আনন্দের সাথে জ্বলজ্বল করছিল। ছেলেটি বললো, ‘চিফ, আমি যেখান থেকে এসেছি সেখানে কোন গাছ ছিল না ও আমি কোনও ডালপালা, কোনও জীবন্ত জিনিস দেখিনি। চূড়ায় উঠে আমি সমুদ্রে ঝলমলে রোদের দৃশ্য দেখলাম।
চিফের মুখটাও এখন জ্বলজ্বল করতে লাগলো! তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং প্রায় বাদ্যযন্ত্রের সুরে জোরে বললেন, ‘আমি এটি জানতাম! আমি যখন তোমার মুখের দিকে তাকালাম তখনই আমি এটি বুঝলাম তুমি সমস্ত দিক থেকে শীর্ষে! এটি তোমার চোখে লেখা আছে! এটি তোমার কণ্ঠে বাজে! আমার পুত্র, টোকেনের জন্য তোমার কোনও ডালপালা লাগবে না। তুমি পর্বতের গৌরব দেখেছো বলে টোকেনের প্রয়োজন অনুভব করোনি!’