নিজস্ব প্রতিবেদক »
বাংলাদেশে উচ্চ ফলনশীল রাবার চাষে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশের রাবার মালিক-শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কারিগরি এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্লোনও দেওয়ার কথা জানিয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় একথা জানানো হয়।
ভারত সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন রাবার বোর্ডের ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম সফর করে। প্রতিনিধি দলের প্রধান ও ভারতীয় রাবার বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ভাসান তাগেসান এ সহায়তার কথা জানান। এর আগে ভারতের রাবার বোর্ডের প্রতিনিধি দল বিএফআইডিসি’র অধীন ফটিকছড়ির দাঁতমারা রাবার বাগান, নার্সারি ও রাবার প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে গতকাল বাংলাদেশ রাবার বোর্ড, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতিবিনিয় করেন তারা। বাংলাদেশ রাবার বোর্ড এ সভার আয়োজন করে।
ইন্টারন্যাশনাল রাবার রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (আআরআরডিবি) সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে সম্পাদিত ক্লোন এক্সচেঞ্জ সমঝোতা স্মারক চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে ক্লোন গ্রহণ সংক্রান্ত এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ রাবার বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান।
সৈয়দা সারওয়ার জাহান বলেন, উন্নত উচ্চ ফলনশীল জাতের ক্লোন পেলে বাংলাদেশের রাবার উৎপাদন অনেক বাড়বে এবং টেকসই শিল্প প্রতিষ্ঠা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় রাবারের উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই শিল্প প্রতিষ্ঠায় ভারতীয় রাবার বোর্ডের পারস্পরিক সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৪৭ সাথে গঠিত ভারতের রাবার বোর্ড আমাদের তুলনায় অনেক অ্যাডভান্স ও উন্নত। তাই তাদের কাছ থেকে আমরা টেকনিক্যাল সাপোর্ট চেয়েছি। ওদের ক্লোনগুলো উচ্চ ফলন জাতের। সেখান থেকে ভ্যারাইটি উচ্চ ফলন জাতের ক্লোন নিতে আগ্রহী। একই সাথে আমাদের দেশের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, রাবার বাগান মালিক ও সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণের অনুরোধ করেছি। এছাড়া আমাদের দেশে যৌথ বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে রাবার উৎপাদনের জন্য উর্বর ভূমি ও পরিবেশ রয়েছে। তারা সেখানে আমাদের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগ করতে পারে। তারা আমাদের আশ্বস্থ করে বলেছে, আমাদের বর্তমানে যেসব জাত রয়েছে সেগুলো যেন প্রোপারলি নাসিং করি। একই সঙ্গে এখানের জন্য যেগুলো সুইটেবল হবে সেগুলো তারা আমাদের সরবরাহ করবে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেবে। বাংলাদেশ থেকে গিয়ে প্রতিনিধি দল বিষয়টি ভারতের সরকারের কাছে জানাবে। সরকার অনুমোদন দিলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরু হবে।
ভারতীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান ভাসান তাগেসান বলেন, বাংলাদেশের রাবার চাষ সম্পর্কে ধারণা নিতে এসেছি। দুই দেশের আবহাওয়াগত মিল থাকলেও রাবার চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে পার্থক্য রয়েছে। ফলে রাবারের মানের তারতম্য হচ্ছে। উন্নতজাতের গাছের চাষ হলে রাবার উৎপাদন বাড়বে এবং তা ভালোভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে পারলে বিশ্ববাজারে রপ্তানি করা যাবে।
রাবার গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা ১৯৬০ সালের পুরনো কয়েকটি ক্লোন দিয়ে এখনো রাবার চাষ করছি। ফলে উৎপাদন ভাল হচ্ছে না। আমাদের দেশে প্রতি হেক্টর জমিতে যে পরিমান রাবার উৎপাদন হয় সময় পরিমান জায়গায় মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে তার পাঁচগুণ বেশি উৎপাদন হচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। ভারতীয় রাবার বোর্ড প্রতিনিধি দলকে আমরা ত্রিপুরা রাজ্যের ক্লোন দিতে বলেছি। সেগুলো বাংলাদেশেও ভাল ফলন হবে। পাশাপাশি পরিচর্চার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের কথা বলেছি।
বাংলাদেশ রাবার গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মঈনুল ইসলাম বলেন, রাবারের উচ্চ ফলনশীল জাত আমদানির দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। রাবার খাতে ভারতের অনেক পুরনো অভিজ্ঞতা। ভারতের রাবার বোর্ডের প্রতিনিধি দল আমাদের বাগান ও কারখানা পরিদর্শন করে আমাদের উন্নত জাতের ক্লোন দেবে বলেছে। এখন প্রয়োজন দ্রুত সেগুলো আনার ব্যবস্থা করা। কারণ ক্লোন দেশে আনার পর নার্সারি ও প্লান্টেশন করে উৎপাদনে যেতে অন্তত ৮ বছর লাগবে। উৎপাদন বাড়লে খরচ কমে আসবে। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজার ধরতে পারবে।
পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মোহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ বলেন, বাংলাদেশে যখন ‘সাদা সোনা’ খ্যাত রাবার চাষ শুরু হয়েছে তখন পার্বত্য জেলার পরিস্থিতি বর্তমান সময়ের মতো ছিল না। অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে সেখানে রাবার চাষ শুরু হয়েছিল। আমরা এই খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে চাই। বাংলাদেশ এবং ভারত সরকার রিজিউনাল কো-অপারেশনে আন্তরিক। ভারতের রাবার বোর্ড অনেক পুরনো; তাদের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে পারি। প্রশিক্ষণ ও টেকনিক্যাল সহযোগিতা পেলে এখাতের উন্নয়ন ঘটবে।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ রাবার গার্ডেন ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছলিমুল হক চৌধুরী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, ফজলুল কাদের, সহসভাপতি মোমিনুল হক চৌধুরী, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সালা উদ্দীন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হক চৌধুরী, সাবেক মহাসচিব কাউছার জামাল, সাবেক সহসভাপতি নুরুল ইসলাম মিয়া, ভারতীয় রাবার বোর্ডের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এমজে রাজু, যুগ্ম রাবার কমিশনার সালি এন, পরিচালক (গবেষণা) ড. জেসি এমডি ও সহকারী পরিচালক সাজু কোরিয়ান।