সুপ্রভাত ডেস্ক »
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আগামী অর্থবছরে উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও কীভাবে তা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে বিশেষ কোন পরিকল্পনা বাজেট প্রস্তাবনায় জানাননি তিনি।
বরং চলতি বছরের মতো নতুন বছরে কৃচ্ছ্রসাধন করার কথা বলার পাশাপাশি ক্রলিং পেগ সিস্টেমের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়িয়ে টাকার দাম স্থিতিশীল রাখা ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমার ওপর ভরসা করে মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনার কথা বলেছেন তিনি।
চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা সত্ত্বেও দেশে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ১০ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি দেখা যাচ্ছে। খবর টিবিএস।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তেল ও চিনি আমদানিতে শুল্ককর কমানোর প্রস্তাব করলেও তা গ্রহণ করেনি অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিকেজি চিনিতে ৪০ টাকার বেশি শুল্ককর আগামী অর্থবছরও বহাল থাকছে। শুল্ককর কমানো হয়নি ভোজ্যতেলসহ অন্য খাদ্যপণ্যেও।
তবে ২৮টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর বিদ্যমান ২% থেকে অর্ধেক করা হয়েছে, যার প্রভাব সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইতোমধ্যে সরকার ওএমএসের জন্য বরাদ্দ কমিয়েছে, যার লক্ষ্য খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা এবং দরিদ্রদের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা। পূর্বের ৫ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা থেকে বরাদ্দ কমিয়ে তা ২ হাজার ৪ কোটি টাকা করা হয়েছে।
গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরের বাজেটেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কৃচ্ছ্রসাধন নীতি প্রয়োগ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়িয়ে টাকার মান স্থিতিশীল রাখার জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
তা সত্ত্বেও এসব উদ্যোগ ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতিকে টেনে নিচে নামাতে পারেনি। মে মাসের শেষে দেশে গড় মূল্যস্ফীতি ৯.৮৯ শতাংশে ও খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ১০.৭৬ শতাংশে পৌঁছায়।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিল গড়ে ৫ থেকে ৫.৫ শতাংশ , যা দেশের মানুষের জন্য সহনীয় পর্যায় ছিল বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
রাজস্ব আহরণ বাড়াতে নতুন অর্থবছরের বাজেটে চিনিযুক্ত বিভিন্ন খাবার, ফোনে কথা বলা, ফ্রিজ, কোল্ড ড্রিংকস, বৈদ্যুতিক বাতি, পানির ফিল্টারসহ বিভিন্ন খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ককর ও ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ভর্তুকির চাপ কমাতে চলতি অর্থবছর কয়েক দফা গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়াবে সরকার। এতে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, যার প্রভাবে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া ক্রলিং পেগ সিস্টেম এর পর ডলারের রেট পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। ঋণের সুদহারও বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এতে খাদ্যপণ্য আমদানি ব্যয় আরও বাড়বে, আমদানি পর্যায়ে অধিক শুল্ককরও পরিশোধ করতে হবে। যা পণ্যমূল্যে প্রভাব ফেলবে।
বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য সরবরাহ পর্যায়ে ত্রুটি ও টাকার অবমূল্যায়নের কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও মূল্যস্ফীতির জন্য নন-ইকোনমিক ফ্যাক্টরকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির জন্য দায়ী করেছে। তবে বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কি ব্যবস্থা নেবে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোন ধারণা দেননি অর্থমন্ত্রী।
তবে মূল্যস্ফীতি কমাতে মানুষের চাহিদা কমানোর দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে উচ্চ সুদহার ও এক্সচেঞ্জ রেটের ফ্লেক্সিবিলিটি দীর্ঘমেয়াদে ভালো ফল দিবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতির চ্যালেঞ্জ বাজেটের বাইরে, কিন্তু বাজেট এতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যেটা আসলেই একটা বড় ভূমিকা পালন করে তা হল সরকারের মুদ্রানীতি। মুদ্রানীতিকে অনেকাংশে কঠোর করা হয়েছে… আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে, আমরা আশাবাদী যে ডিসেম্বরের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি কমে আসবে।’
সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, এখন পণ্যমূল্য যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতেই মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী যদি এখনকার দামের চেয়েও নতুন অর্থবছর আরও ৬.৫ শতাংশ দাম যুক্ত হয়, তাতে কষ্ট আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, ইনফ্লেশন খুব একটা কমাতে পারবে না। মূল্যস্ফীতির হার আগামী বছর হয়ত কিছুটা কমবে। কিন্তু পণ্যমূল্য নিয়ে এখন মানুষের যে ভোগান্তি, তা কমবে না।’