উখিয়া-টেকনাফে জমে উঠেছে সুপারির হাট

ন্যায্য দাম পাওয়ায় খুশি চাষিরা

দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে সুপারির হাট বেশ জমে উঠেছে। প্রথমদিকে চাষিরা হতাশ হলেও এখন বাজারে সুপারির ভালো দাম পাওয়ায় তারা খুবই খুশি। অধিকাংশ চাষি জানিয়েছেন, এবারের মৌসুমে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদিত সুপারি স্থানীয়ভাবে চাহিদা পূরণ করে প্রায় ৮০ কোটি টাকার সুপারি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বহু স্থানে বাজারজাত হচ্ছে। শুধু তাই নয় এখানকার সুপারি সৌদি আরব, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফে ১ হাজার ৮ শত হেক্টর সুপারি বাগান রয়েছে। যার ফলন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৫ শত ২০ মেট্রিক টন।
উখিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা জানান, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ৯ শত ৫০ হেক্টর সুপারি বাগান রয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৭ শত ৮০ মেট্রিক টন।
অপরদিকে, টেকনাফ উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৮ শত ৫০ হেক্টর সুপারি বাগান রয়েছে। যার ফলন উৎপাদন নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৭ শত ৪০ মেট্রিকটন।

স্থানীয় চাষিরা জানান, উখিয়া-টেকনাফ সমুদ্র উপকূলীয় হওয়ায় এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি বাগানের উপযোগী। তাই উপকূলীয় এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে সুপারি বাগান রয়েছে। তারা আরও জানান, আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে শত শত একর জায়গায় সুপারি বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। উখিয়ার সোনার পাড়ার আব্দুস সালাম জানান, অগ্রহায়ণ ও কার্তিক মাস হচ্ছে সুপারির ভরা মৌসুম। এবারে আশ্বিন মাসের শেষের দিকে বাজারে আসতে শুরু করে সুপারি।

ব্যবসায়ী শাকের উদ্দিন সাগর ও আবুল কালাম জানান, এবছর সুপারির প্রতি পোন (৮০টি) ৩ শত থেকে ৪ শত টাকা এবং প্রতি কাউন (১২৮০টি) সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মানভেদে দাম আরও বেশি।

পান সুপারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুলতান আহমদ জানান, প্রতি মৌসুমে এ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে লাখ লাখ টাকার সুপারি বাজারজাত হচ্ছে। এসব সুপারি ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে চলে যাচ্ছে। এসব সুপারি প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অর্থকরী ফসল সুপারি উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল স্থানীয়ভাবে ৭ হাজারেরও অধিক পরিবার। বাণিজ্যিকভাবে সুপারি উৎপাদনে সক্ষম হওয়ায় চলতি মৌসুমে সুপারির বাম্পার উৎপাদন হয়েছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা।

সোনার পাড়া গ্রামের বাগান মালিক আব্দুর জব্বার ও শামসুল আলম জানান, সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আরও সুপারি বাগান গড়ে তুলে অধিক ফলন সম্ভব হত।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে প্রায় ৪০ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হয়েছে। সুপারি বাজারজাত করে কৃষকরা লাভবান হওয়ার কারণে এলাকাভিত্তিক সুপারিচাষ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।