রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া »
মরণঘাতি মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ দূরত্বে রাখার মহান উদ্যোগ নিয়ে সরকার এক বছরেরও অধিক সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। এ ফাঁকে ছাত্রীরা বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। অপর দিকে শিক্ষার্থীরা তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান না থাকায় তাদের বিষয় ভিত্তিক পূর্ব অভিজ্ঞতার ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় অনলাইন ক্লাসে শতভাগ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিশ্চিত করণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকসহ শিক্ষানুরাগী অভিভাবক মহল।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ২৭টি মাধ্যমিক, ১৯টি মাদ্রাসা, ২টি কলেজ ও ২ টি ভোকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। করোনার প্রভাবে গেল বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এবস্থায় ৭ম থেকে ৮ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর অনেক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। আবার অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবে সংসারের প্রয়োজনে অনেক শিক্ষার্থী শিশু শ্রমের দিকে ঝুঁকেছে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান না থাকায় শিক্ষার্থীরা তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার, অসৎ সঙ্গ সহ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ায় পরিবারে অশান্তি নেমে এসেছে।
পালংখালী ইউনিয়নের তাজনিমারখোলা গ্রামের মৎস্য চাষী হায়দার আলী মিয়াজী জানায়, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অলস সময় কাটাতে গিয়ে ছেলে সন্তানরা মোবাইলের প্রতি ঝুঁকেছে। তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারে পিতা-মাতার দৃষ্টি এড়াতে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে অশ্লীল নগ্ন ছবি ও জুয়ার মত খেলাধুলা করছে।
এনিয়ে গ্রামে ছেলেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি পরে মারামারির ঘটনা ঘটছে। যা নিয়ে পরিবারে তথা সমাজে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, তার স্কুলের অনেক ছাত্রী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে ৭৫% শতাংশ এসাইনমেন্ট জমা পড়েনি। শিক্ষার্থীর সাথে শিক্ষকদের যোগাযোগ নেই। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের আবার স্কুল মুখী করা কঠিন হয়ে পড়বে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) বদরুল আলম বলেন, করোনার মত মহামারি থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ দূরত্বে রাখতে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। টানা ছুটিতে থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন অন্তত স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণি কক্ষে আনার ব্যবস্থা করলে ভাল হবে। এছাড়া শিক্ষকদের বিষয় ভিত্তিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি পূরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা একান্ত অপরিহার্য বলে ওই কর্মকর্তা মনে করেন।