সুপ্রভাত ডেস্ক »
কেন উইলিয়ামসন যেন বুঝেই উঠতে পারছিলেন না কিছু। বোল্ড হয়ে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে স্টাম্পের দিকে তাকালেন। ড্রেসিং রুমে ফেরার পথেও বারবার পেছন ফিরে তাকালেন। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বলটি কীভাবে স্টাম্পে ছোবল দিল, সেটিই হয়তো বোঝার চেষ্টা করলেন। বোলার তাইজুল ইসলামের চোখে-মুখে তখন স্বস্তির ছাপ। একটু দেরিতে হলেও অন্তত দায়মোচন তো কিছুটা হলো!
৬৩ রানে এই তাইজুলই ফেলে দিয়েছিলেন উইলিয়ামসনের সহজ ক্যাচ। পরে ৭০ রানে আরেক দফায় জীবন পান তিনি। সেসবের মূল্য তো কিছু চুকাতে হবেই। তবু ভালো যে সেঞ্চুরির পর তাকে আর বেশি দূর এগোতে দেয়নি দ্বিতীয় নতুন বলে তাইজুলের দুর্দান্ত এক ডেলিভারি। দারুণ বোলিংয়ের দিনে বাংলাদেশের সামনে মূল বাধার দেয়াল ছিলেন তিনি। শেষ বিকেলে সেখানে ফাটল ধরিয়েই বাংলাদেশ জিইয়ে রাখল লিড পাওয়ার আশা।
সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৩১০ রানের জবাবে নিউ জিল্যান্ড বুধবার দ্বিতীয় দিন শেষ করে ৮ উইকেটে ২৬৬ রান নিয়ে।
৯ উইকেট নিয়ে দিন শুরু করা বাংলাদেশ সকালে শেষ উইকেট হারায় দিনের প্রথম বলেই। এরপর বোলাররা দিনজুড়েই দারুণ বোলিং করেন। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে বরাবরই রানের জোয়ার বইয়ে দেন যিনি, সেই উইলিয়ামসনকে আটকে রাখা যায়নি। তার ব্যাট থেকে এসেছে ১০৪ রান।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ৯ ইনিংস খেলে তার চতুর্থ সেঞ্চুরি এটি, ফিফটি আছে আরও ৪টি। ব্যাটিং গড় ১১২.৪২।
এই ম্যাচের আগে নিউ জিল্যান্ডের শেষ টেস্ট ছিল গত মার্চে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই ম্যাচে উইলিয়ামসন খেলেছিলেন ২১৫ রানের ইনিংস। সেঞ্চুরি করলেন তিনি টানা চার টেস্টে। খবর বিডিনিউজ।
সব মিলিয়ে ২৯ টেস্ট সেঞ্চুরিতে এখন তিনি স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও ভিরাট কোহলির পাশে।
ক্যাচ হাতছাড়ার মুহূর্তটি বাদ দিলে দিনটি যতটা উইলিয়ামসনের, ততটা তাইজুলেরও। দলকে প্রথম ব্রেক থ্রু তিনি এনে দিয়েছেন। ড্যারিল মিচেলকে ফিরিয়ে বিপজ্জনক জুটি ভেঙেছেন। শেষ বেলায় দ্বিতীয় নতুন বলে উইলিয়ামসনকে ফেরানোসহ দুই উইকেট নিয়ে দলকে লিডের দুয়ারে নিয়ে গেছেন।
দারুণ বোলিং করেছেন বাংলাদেশের অন্য দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসান আর একমাত্র পেসার শরিফুল ইসলাম। এমনকি হাত ঘুরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন মুমিনুল হকও।
আলাদা করে বলতে হবে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর কথাও। চার দফায় তার বোলিং পরিবর্তনের প্রথম ওভারেই ধরা দিয়েছে উইকেট। পরিস্থিতি বুঝে বোলারদের কাজে লাগানো, ব্যাটসম্যান বুঝে ফিল্ডিং সাজানো, সবই ছিল চোখে পড়ার মতো।
দিনের শেষটা দারুণ হলেও শুরুটা বাংলাদেশের জন্য ছিল খানিকটা হতাশার। প্রথম বলেই আউট হওয়ার পর শরিফুল ইসলাম বল হাতে প্রথম ওভারেই রান দেন ১০। পরে অবশ্য বেশ গুছিয়ে নেন তিনি। উইকেট থেকে সিম মুভমেন্টও কিছুটা আদায় করে নেন। নতুন বলে আরেক প্রান্তে মিরাজও বেশ নিয়ন্ত্রিত শুরু করেন। তবে এই দুজনের ১২ ওভার নিরাপদেই কাটিয়ে দেন টম ল্যাথাম ও ডেভন কনওয়ে।
ত্রয়োদশ ওভারে আক্রমণে এসেই উইকেট এনে দেন তাইজুল। লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপ করার চেষ্টায় ক্যাচ দেন ল্যাথাম। একটু পর সিলি পয়েন্টে শাহাদাত হোসেনের দুর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচে বিদায় নেন কনওয়ে।
উইলিয়ামসন যেন বাইরে থেকেই থিতু হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। শুরু থেকেই তার ব্যাটে দেখা যায় বরাবরের সেই নির্ভরতা। শুরুতে তিনি জুটি গড়ে তোলেন হেনরি নিকোলসের সঙ্গে, এরপর ড্যারিল মিচেলকে নিয়ে।
তবে কোনো জুটিই খুব বড় হতে দেয়নি বাংলাদেশ। শরিফুলের নতুন স্পেলের প্রথম ডেলিভারিতেই বেশ বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে আউট হন নিকোলস। মিচেলকে শুরুতেই ফেরানোর সুযোগ মিলেছিল। তার ব্যাটে আলতো ছুঁয়ে আসা বল কিপার নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে আশ্রয় নিলেও আম্পায়ার আউট দেননি, বাংলাদেশ রিভিউ নেয়নি। সেই মিচেলকে পরে ৪১ রানে থামান তাইজুল। নাঈমের লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে টম ব্লান্ডেলও ফেরেন দ্রুত।
নিউ জিল্যান্ড এরপরই পায় ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি। গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন উইলিয়ামসন। এই জুটি ভাঙতে মুমিনুলের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক শান্ত। কাজে লেগে যায় সেই ফাটকা। স্লিপে দারুণ ক্যাচ নিয়ে ফিলিপসকে ৪২ রানে থামান শান্তই। জুটি থামে ৭৮ রানে।
৬৩ ও ৭০ রানে বেঁচে যাওয়া উইলিয়ামসনের শতরান আসে ১৮৯ বলে। এরপরই নতুন বলের ঝলক। চকচকে বলে দারুণ ডেলিভারিতে উইলিয়ামসনকে বোল্ড করার পর ইশ সোধিকেও ফিরিয়ে দেন তাইজুল।
তিনি তৃতীয় দিন শুরু করবেন ৫ উইকেটের আশায়, বাংলাদেশ থাকবে লিডের আশায়। তবে প্রথম ইনিংসে দুই দলের পার্থক্য হয়তো খুব বেশি থাকবে না।
উইকেটে যেভাবে স্পিন ধরতে শুরু করেছে, বাকি দিনগুলিতে ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে। ম্যাচে ব্যবধানও গড়ে উঠবে এই সময়টাতেই।