সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক :
গত অর্ধ শতাব্দীতে ভারতের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান কে? ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে অনলাইনে সমীক্ষা করেছিল উইজডেন। তাতে শচীন টেন্ডুলকারকে টপকে এক নম্বরে আছেন রাহুল দ্রাবিড়। সেরার লড়াইয়ে মোট ১১,৪০০ ক্রিকেটপ্রেমীর থেকে ৫২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন দ্রাবিড়। শচীন পেয়েছেন ৪৮ শতাংশ ভোট। তিন নম্বরের লড়াইয়ে বিরাট কোহালিকে পিছনে ফেলেছেন সুনীল গাওস্কর। এই ভোটাভুটি নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
ক্রিকেটপ্রেমীদের বিচারে গত ৫০ বছরে টেস্টে ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান হলেন রাহুল দ্রাবিড়। ১৬৪ টেস্টে ৫২.৩১ গড়ে ১৩২৮৮ রান করেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের শ্রীযুক্ত নির্ভরযোগ্য। ১৯৯৬ সালে অভিষেক হয়েছিল। ‘দ্য ওয়াল’ ২০১২ সালে শেষ বার তিন নম্বরে নেমেছিলেন পাঁচ দিনের আসরে। ৩৬ সেঞ্চুরি ও ৬৩ হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। খেলেছেন ৩১২৫৮ বল।
ক্রিকেটপ্রেমীদের কারও কারও মতে ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ফ্যাব ফাইভ’-এর মধ্যে সেরা দ্রাবিড়ই। তিনে নেমে ইনিংসের একটা দিক ধরে রাখা, কঠিন পরিস্থিতিতে দলকে উতরে দেওয়া, চাপ কাটিয়ে স্বস্তির অবস্থানে আনার কাজটা ধারাবাহিকতার সঙ্গে করে গিয়েছেন দ্রাবিড়। দলের দরকারে ওপেন করেছেন, আবার ছয়ে নেমেও ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছেন।
টেস্টে কখনও কখনও বল খেলা রান করার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা। যা তিনি করেছেন বহু বার। বোলারদের ক্লান্ত করে দিয়ে পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের কাজ সহজ করে তুলেছেন। কখনও নিজের জন্য খেলেননি, নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে আটকে থাকেননি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রাবিড়ের পারফরম্যান্স প্রত্যাশিত মানের নয়।
শচীন তেন্ডুলকরের অভিষেক হয়েছিল পাকিস্তানে, ১৯৮৯ সালে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত লম্বা কেরিয়ারে ২০০ টেস্ট খেলেছেন মাস্টার ব্লাস্টার। ৫৩.৭৮ গড়ে তিনি করেছেন ১৫৯২১ রান, যা সবার চেয়ে বেশি। ৫১ সেঞ্চুরিও রেকর্ড। রয়েছে ৬৮ হাফ-সেঞ্চুরি। সর্বাধিক অপরাজিত ২৪৮। ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে তিনি ‘গড অফ ক্রিকেট।’
অনেকের মতেই ডন ব্র্যাডম্যানের পর বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান হলেন শচীন। মুম্বইকরের ক্লাস কর্নাটকির মধ্যে ছিল না বলে বিশ্বাস ক্রিকেটপ্রেমীদের। ভাল বলকেও সীমানায় পাঠানোর ক্ষমতা ছিল শচীনের। এটাই ভাল ও গ্রেট ব্যাটসম্যানের মধ্যে তফাত গড়ে দেয় বলে মানেন অনেকে। বিশ্বের সর্বত্র দাপট দেখিয়েছেন তিনি।
কার্টলি অ্যামব্রোজ, গ্লেন ম্যাকগ্রা, অ্যালান ডোনাল্ড, ওয়াসিম আক্রম, শেন ওয়ার্নদের মতো বোলারদের বিরুদ্ধে দাপট দেখিয়েছেন শচীন। এই বোলারদের বিরুদ্ধেও গড় ৬০-এর বেশি রেখেছেন। ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশার চাপ নিয়ে দুই দশকেরও বেশি শাসন করেছন যে কোনও বিপক্ষকে। সমস্ত দেশে, সমস্ত কন্ডিশনে ভরসা দিয়েছেন শচীন।
১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অভিষেক হয়েছিল সুনীল গাওস্করের। ১৯৮৭ সালে শেষ বার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা গিয়েছিল তাকে। ১২৫ টেস্টে ৫১.১২ গড়ে ১০১২২ রান করেছেন তিনি। সেঞ্চুরির সংখ্যা ৩৪, হাফ-সেঞ্চুরির সংখ্যা ৪৫। সর্বাধিক অপরাজিত ২৩৬। লিটল মাস্টার বিশ্বের সেরা ওপেনারদের মধ্যে পড়েন। ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকের মতে, কারও সঙ্গেই গাওস্করের তুলনা হয় না। হেলমেট ছাড়াই ক্যারিবিয়ান পেস ব্যাটারির বিরুদ্ধে প্রতিকূল পরিবেশে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। তাকে নিয়ে রচিত হয়েছিল ক্যালিপসো। অস্ট্রেলিয়ার পাঁচ টেস্ট ভেন্যুতেই সেঞ্চুরি রয়েছে তার। প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ১০ হাজার রান করেছিলেন তিনি।
চতুর্থ ইনিংসের বিশেষজ্ঞ ছিলেন গাওস্কর। দেশের বাইরেও অজগ্র লড়াকু ইনিংস খেলেছেন তিনি। ১৯৭৯ সালে ওভালের ২২১, ’৭৬-এ পোর্ট অফ স্পেনের ১০২, ’৭১-এ পোর্ট অফ স্পেনেই দুই ইনিংসে ১২৪ ও ২২০, করাচিতে জোড়া সেঞ্চুরি, অস্ট্রেলিয়ায় দ্বিতীয় ইনিংসে তিন সেঞ্চুরির মতো স্মরণীয় বহু ইনিংস রয়েছে তার। বিদেশে পেস বোলিংয়ের ভীতি কাটিয়ে দিয়েছিল তার ব্যাট।
বিরাট কোহালি রয়েছেন চারে। এখনও পর্যন্ত ৮৬ টেস্ট খেলেছেন তিনি। ৫৩.৬২ গড়ে তার ব্যাটে এসেছে ৭২৪০ রান। ২৭ সেঞ্চুরি, ২২ হাফ-সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন এর মধ্যে। সর্বাধিক অপরাজিত ২৫৪। এই প্রজন্মের সেরা ক্রিকেটারদের মধ্যে পড়েন তিনি।
টেস্ট ক্রিকেটের পাশাপাশি এক দিনের ক্রিকেট ও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট, তিন ঘরানাতেই কোহালির গড় পঞ্চাশের উপরে। টেস্টে এখন তিনি বিশ্বের দুই নম্বর ব্যাটসম্যান। কিছু দিন আগেও ছিলেন শীর্ষে। ভারতের প্রথম গোলাপি বলের টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।
একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের সর্বত্র টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন কোহালি। টেস্টে ভারতীয়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে তার। শচীনের যেখানে ২০০ টেস্টে রয়েছে ছয়টি দ্বিশতরান, সেখানে এর মধ্যেই সাত বার দুশোর গণ্ডি টপকেছেন কোহালি। ক্রিকেটমহলের চর্চা অনুসারে শচীনের রেকর্ড তার ব্যাটেই ভাঙতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
খবর : আনন্দবাজার’র।
খেলা