দুই ঈদে শহর থেকে লাখ লাখ মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যায় প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই আনন্দস্মৃতি নিয়ে ফিরে আসতে পারেন না। এরমধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা একটি বড় কারণ হলেও নীরবে আরেকটি দুর্ঘটনা বিষাদের অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে, যেটি নিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চরম উদাসীনতা রয়েছে। তাহলো পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার। গত ঈদের ছুটির পর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সরকারিভাবে ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরুর দিন ১০ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল, (বাংলা নববর্ষ) পর্যন্ত পাঁচ দিনে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের। এর মধ্যে ১৪টি শিশু। আর ছুটির আগে-পরে ৯ ও ১৫ এপ্রিল আরও ৭ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে। এর মধ্যেও শিশু ৬ জন।
বাংলাদেশের প্রথম স্বাস্থ্য ও তথ্য জরিপ ২০১৩ অনুযায়ী, ১ থেকে ১৭ বছরের শিশুদের অপমৃত্যুর প্রধান কারণ পানিতে ডুবে মৃত্যু, যা যৌথভাবে নিউমোনিয়া, অপুষ্টি ও কলেরার কারণে মৃত্যুর চেয়েও বেশি বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাস্থ্য ও তথ্য জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী, বছরে ১ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১৪ হাজার ৪৩৮ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।
বৈশ্বিক তথ্য অনুযায়ী, পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মারা যায় ১ থেকে ৪ বছরের শিশুরা এবং দ্বিতীয় ঝুঁকিপূর্ণ বয়স হলো ৫ থেকে ৯ বছর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেয়ে শিশুদের তুলনায় দ্বিগুণ ছেলে শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো, বয়স্কদের তত্ত্বাবধানের অভাব, গ্রামে শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রের অভাব, অতি দরিদ্রতা, পুকুর-জলাধারে নিরাপত্তা বেষ্টনীর অভাব, শিশুদের সাঁতার না জানা। এছাড়া গত কয়েকবছরে গ্রাম-গঞ্জ পর্যন্ত ইন্টারনেট বিস্তৃত হওয়ায় মা-বাবাসহ পরিবারের বড়রা ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মগ্ন থাকে বেশি। এ কারণে শিশুদের সঠিক দেখভাল বা শিশুদের প্রতি অধিক মনোযোগও দিতে পারেন না।
পানিতে ডুবে মৃত্যু পরিহারযোগ্য। কিন্তু সমস্যা হলো, এমন মৃত্যু পরিহারে প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশে অপেক্ষাকৃত কম।
ইন্টারন্যাশনাল ড্রাউনিং রিসার্চ সেন্টার (আইডিআরসি) বাংলাদেশের পরিচালক আমিনুর রহমানের মতে, পানিতে ডুবে মৃত্যু তিনভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রথমত, প্রাতিষ্ঠানিক নজরদারি প্রয়োজন। সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত ডুবে মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে। ওই সময়ে মায়েরা কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাই শিশুদের দিবা-যত্ন কেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ৬ থেকে ১০ বছরের শিশুদের অবশ্যই সাঁতার শেখাতে হবে। তৃতীয়ত, ডুবে যাওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে কী করতে হবে, সে সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। ডুবে যাওয়া শিশু বা ব্যক্তির মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস দিতে হবে এবং হৃৎপিণ্ড বরাবর এক ইঞ্চি পর্যন্ত দেবে যায় এমনভাবে চাপ দিতে হবে।
এবারও ঈদে প্রচুর পরিবার গ্রামে গেছেন। আমরা এ বিষয়ে মা-বাবা ও পরিবারের দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান জানাব তারা যেন নিজ নিজ শিশুদের প্রতি সতর্ক থাকেন।
এ মুহূর্তের সংবাদ