অফডকগুলোর সামনে পণ্যবাহী গাড়ির দীর্ঘজট
সক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই : চেম্বার প্রেসিডেন্ট
ভূঁইয়া নজরুল »
কাভার্ডভ্যান চালক দুলাল। সাগরিকা এলাকার গার্মেন্টস কারখানা থেকে আগে দিনে দিনে পতেঙ্গার অফডকে পণ্য দিয়ে আসতে পারতেন। সেই দুলাল গত তিনদিন ধরে পতেঙ্গার সাগর পাড়ের আউটার রিং রোডে বসে আছে পণ্য নিয়ে। পতেঙ্গার অফডকে (আমদানি-রপ্তানি পণ্য রাখার স্থান) ঢুকতে পারছে না। এই চিত্র শুধু দুলালের ক্ষেত্রেই নয়, অসংখ্য চালক পণ্য নিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করছেন। এতে বাড়ছে কাভার্ডভ্যানের ভাড়া, আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল আউটার রিং রোড এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ইপিজেড থেকে পতেঙ্গা সি বিচ পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন। রপ্তানিপণ্যবাহী এসব ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পতেঙ্গা এলাকার অফডক ইনকনট্রেন্ড কনটেইনার টার্মিনাল, এসএপিএল, ওসিএল ও ইস্টার্ন লজিস্টিক লিমিটেডে প্রবেশ করার কথা। কথা হয় কাভার্ডভ্যান চালক হারুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিবছর ঈদ মৌসুম এলেই এমন দীর্ঘ জট দেখা যায়। একসাথে অধিক পণ্য নিয়ে প্রবেশ করতে গেলে অফডকগুলো পণ্য লোডিং ও আনলোডিং করতে হিমশিম খায়। এতে আমাদের অপেক্ষার প্রহর বাড়ে।’
অপেক্ষার এই দীর্ঘ বহর শুধু সাগর পাড়ের আউটার রিং রোড নয়, চট্টগ্রাম বন্দরের কলোনীর পশ্চিম পার্শ্বের এছাক ব্রাদ্রার্স কনটেইনার ডিপো থেকে টোল প্লাজা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন রয়েছে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের। ডিটি রোডের পোর্ট লিংক ও কেডিএস অফডকেও দীর্ঘ লাইন। এর কারণ কি জানতে চাইলে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ও এছাক ব্রাদার্স ডিপোর জেনারেল ম্যানেজার রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ‘মূলত: তিন কারণে অফডকগুলোতে জ্যাম দেখা দিয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে প্রথমত: বিএম কনটেইনার ডিপো বন্ধ থাকায় সেখানকার পণ্যগুলো বিভিন্ন ডিপোতে যাচ্ছে এবং এতে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। দ্বিতীয়ত: ঈদের আগে গার্মেন্টস কারখানাগুলো অগ্রিম শিপমেন্ট করে, এত কম সময়ে অধিক কনটেইনারের চাপ দেখা দেয়। তৃতীয়ত: রপ্তানিমুখী পণ্যের চাপ বাড়লেও নতুন নতুন অফডক গড়ে ওঠেনি, নতুন অফডকের প্রয়োজন।’
তবে এসব অজুহাত মানতে নারাজ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। এবিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) লিখিতভাবে চিটাগাং চেম্বারকে জানিয়েছে। চিটাগং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন,‘অফডকগুলো সক্ষমতা অর্জন করতে পারছে না বলে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ জটের তৈরি হয়েছে। সকল অফডকের সামনে গাড়ির দীর্ঘ লাইন থাকায় ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান আটকে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাক পাচ্ছে না, অধিক দামে গাড়ি ভাড়া করতে হচ্ছে।’
অধিক দামে গাড়ি ভাড়ার কথা স্বীকার করে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘আমরা গত সোমবার ঢাকার গাজীপুর থেকে চট্টগ্রামের জন্য একটি কাভার্ডভ্যান ভাড়া করেছি ৬৫ হাজার টাকায়, গতকাল মঙ্গলবার তা ৭৫ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে। স্বাভাবিকসময়ে এই ভাড়া সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা হয়ে থাকে।’
অফডকগুলো সক্ষমতার অভাবে শিল্প মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করে বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন,‘ সব ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পথে পথে আটকা থাকায় গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো ভাড়া বেশি নিচ্ছে। একটি ট্রাক অনেকদিন আটকা থাকছে বলে পরবর্তীতে ভাড়াও বাড়ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প মালিকরা।’
আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের সাথে জড়িত একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদ এলেই পোশাক মালিকরা অগ্রিম শিপমেন্ট করে থাকে। ঈদের পর তাদের কারখানা বন্ধ থাকে বলে ঈদের আগে সকল পণ্য অফডকগুলোতে পাঠিয়ে দেয়। আর অফডকগুলো রপ্তানিবাহী সকল পণ্য জাহাজীকরণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠিয়ে দেয়। ঈদের সময় কারখানা বন্ধ থাকলেও অফডক ও চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম সচল থাকে। এবিষয়ে ইনকনট্রেন্ড কনটেইনার লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন,‘ প্রতিবছর ঈদের সময় বাড়তি চাপ থাকে। এবছর সেই বাড়তি চাপের সাথে যুক্ত হয়েছে বিএম কনটেইনারের পণ্যগুলো। ফলে মানসম্মত অফডকগুলোতে আগের তুলনায় বেশি পণ্য প্রবেশ করছে এবং তা সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
জানা যায়, বিএম কনটেইনার ডিপোর পণ্যগুলো চার থেকে পাঁচটি ডিপোতে স্থানান্তর হচ্ছে। আর ভিড়ও সেসব ডিপোতে বেশি।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯২ শতাংশ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম হলেও শতভাগ রপ্তানি পণ্য অফডক হয়ে বন্দর ইয়ার্ডে প্রবেশ করে। অপরদিকে আমদানিবাহী ৩৮ আইটেমের পণ্য অফডক হয়ে আমদানিকারকের কাছে পৌঁছে। ফলে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে অফডকগুলোর গুরুত্ব অনেক। বর্তমানে প্রায় ১৭টি অফডক রয়েছে চট্টগ্রাম এলাকায়।