সুপ্রভাত ডেস্ক »
চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো তিন দিনব্যাপী ইস্পাহানী – দৃষ্টি বিজনেস আইডিয়া কনটেস্ট ২০২৫ এর গ্র্যান্ড ফাইনাল ৩১ মে সন্ধ্যায় ব্র্যাক লাইনিং সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়।
এবারের প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছিল এমন একটি নতুন ব্যবসার পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা উপস্থাপন করা, যা বর্তমানে চট্টগ্রামে নেই এবং সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকার মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য।
দৃষ্টি চট্টগ্রামের আয়োজনে উদ্যোক্তা তৈরি, ব্যবসা পরিকল্পনা, প্রসার-প্রচার এবং ব্যান্ডিং সংক্রান্ত এটি চট্টগ্রামের একমাত্র আয়োজন যা বিগত ১৫ বছর যাবৎ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রামের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭টি দল অংশগ্রহন করে। চুড়ান্ত পর্বে ছয়টি দল জায়গা করে নেয় এবং নিজেদের উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক ধারণা উপস্থাপন করে।
চুডান্ত পর্বে নিজেদের দক্ষতা ও নতুন আইডিয়া দিয়ে চ্যাম্পিয়ান হয় ফারিহা আহমেদ রাইসা, আবদুর রহমান ও রিনভি নুসরাত প্রাপ্তির সমন্বয়ে গঠিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের দল টিম ডাইভারসাম। তারা চট্টগ্রামে উন্নত চিকিৎসা সেবার ও রোগ নির্নয়ের সুযোগের অভাব তুলে ধরে এমন একটি ব্যবসা মডেল উপস্থাপন করে, যেখানে ভারত ও ঢাকামুখী চিকিৎসা নির্ভরতা হ্রাস পাবে। তাদের প্রস্তাবিত সেবার মধ্যে রয়েছে ক্যান্সার নির্ণয়, অটিজম ও বিভিন্ন জিনগত রোগ নির্নয়, বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট, গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন জেনেটিক পরীক্ষা— যা বর্তমানে ঢাকাতেই করতে হয়। প্রথম রানার-আপ হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের দল এফবিডিএ ফাইন্যান্সিয়াল ফানিস।
তারা পুরনো বা অব্যবহৃত কন্টেইনার ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী পড হাউজ (Portable on Demand House) নির্মাণের পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। এই ঘরগুলো পর্যটন এলাকায় অস্থায়ী আবাসন, শ্রমিকদের জন্য বাসস্থান কিংবা স্টুডেন্ট হোস্টেল হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী হবে। তারা দেখায়, কীভাবে কম খরচে, অল্প জায়গায়, পরিবেশবান্ধব অথচ কার্যকর আবাসন গড়ে তোলা সম্ভব পুরনো কন্টেইনারের পুনঃব্যবহার করে। চুডান্ত পর্বে বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কর্পোরেট কনসালটেন্ট আহমেদ জিবরান, দি বিজনেস স্ট্যান্ডারের স্টাফ করেসপনডেন্ট মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ইউসুফ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাকনেজমেন্ট শিক্ষক ড. মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন ও কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব তাহরিন তারান্নুম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস. এম. নছরুল কদির। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ই¯পাহানী গ্রæপের ফিনেন্স এÐ একাউন্স এর মহাব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম শিপলু, চট্টগ্রাম জেলা ক্রিড়া সংস্থার নির্বাহী কমিটির সদস্য বৃজেট ডায়েস, এসপেরিয়া হ্যালথ কেয়ার লিমিটেড এর চেয়ারম্যান গোলাম বাকী মাসুদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যাল জেনেটিক ইঞ্জিরিয়ারিং এÐ বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আদনান মান্নান, দৃষ্টি চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ বকুল ও দৃষ্টি চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি কশসাফুল হক শেহজাদ। দৃষ্টি চট্টগ্রামের সভাপতি সাইফ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন দৃষ্টি চট্টগ্রামের সহ সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাবের শাহ, সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মুন্না, সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্না মজুমদার, সদস্য মেহেবুবা কবির তিসা ও জুনায়েদ আসাদ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক এস. এম. নছরুল কদির বলেন, “চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা আজ প্রমাণ করেছে, তারা শুধু চাকরিপ্রত্যাশী নয় বরং উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা অর্জন করেছে। তাদের প্রস্তাবিত আইডিয়াগুলো বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে।”
বিশেষ অতিথি ইস্পাহানী গ্রæপের মহাব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম শিপলু বলেন, ইস্পাহানী সবসময় শিক্ষা ও উদ্ভাবনের পৃষ্ঠপোষকতায় পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।”
দৃষ্টি চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ বকুল বলেন, “এই প্ল্যাটফর্ম তরুণদের উদ্ভাবনী মনোভাবকে উৎসাহিত করে। ভবিষ্যতে আমরা জাতীয় পরিসরে চট্টগ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আরও বৃহৎ আয়োজনের পরিকল্পনা করছি।”
সভাপতির বক্তব্যে সাইফ চৌধুরী বলেন, “এই আয়োজন প্রমাণ করেছে, তরুণরা বাস্তব সমস্যাকে কেন্দ্র করে প্রযুক্তিনির্ভর ও কার্যকর সমাধান তৈরি করতে পারে। তাদের এই মানসিকতা চট্টগ্রামকে দেশের অন্যতম উদ্যোক্তা হাবে পরিণত করতে সহায়ক হবে।”
দৃষ্টি চট্টগ্রামের আয়োজনে ও ইস্পাহানী চা এর পৃষ্ঠপোষকতায় এই প্রতিযোগিতা চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আয়োজকরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।