নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »
সাগরে নিরাপদ প্রজননের জন্য ইলিশ ধরা, পরিবহন, বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময়ের ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হতে যাচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) থেকে। এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়ে চলবে ২ নভেম্বর পর্যন্ত।
এদিকে ইলিশ আহরণের মৌসুম প্রায় শেষ। কিন্তু ভরা মৌসুমের শেষ মুহূর্তেও উপকূলে ইলিশের নাগাল না পেয়ে হতাশ কক্সবাজারের লাখো জেলে। বন্ধের সময় কীভাবে সংসার চলবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাঁদের।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে শহরের বাঁকখালী নদীর ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে ঘাটে ফিরেছে ৩০ থেকে ৩৫টি ট্রলার। প্রতিটি ট্রলারে ইলিশ ধরা পড়েছে ৫০ থেকে ২০০টি।
কিছু ট্রলারে কয়েক মণ করে মাইট্যা, চাপা, পোপা, রুপচাঁদা, কামিলাসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ ধরা পড়েছে। ঝুড়ি বোঝাই করে মাছগুলো বিক্রির জন্য আনা হয় নুনিয়াছটা ফিশারিঘাটের মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে।
এফবি সোহেল ট্রলারের জেলে আবদুল মাবুদ (৫২) বলেন, সাগর উত্তাল থাকায় গভীর সাগরে গিয়ে ইলিশ আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সমুদ্রে টানা পাঁচ দিন জাল ফেলে তাঁরা মাত্র ১৭০টি ইলিশ ধরতে পেরেছেন।
১৪ আগস্ট থেকে কক্সবাজার উপকূলে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লেও পর্যায়ক্রমে তা কমে আসে।
মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে, স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে ওই সময় কক্সবাজার থেকে অন্তত ৮ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইলিশ চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে বৈরি পরিবেশের কারণে ইলিশের তেমন নাগাল পাচ্ছেন না জেলেরা।
এখন ফিশারিঘাটসহ উখিয়া, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়ায় দৈনিক ২০০ মেট্রিকটন ইলিশ আহরণ করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ইলিশ ট্রলারে করে সরাসরি চাঁদপুরে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার ফিশারিঘাটে ২ মেট্রিক টন ইলিশ ও ৩ মেট্রিকটন অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ বিক্রি হয়েছে বলে জানান মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. বদরুদ্দৌজা।
ফিশারিঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির উপদেষ্টা ও ইলিশ ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকেও এই মৎস্য অবতরণকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ টন ইলিশ ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু এখন দিনে দুই টন ইলিশও সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ইলিশ আহরণ কমে যাওয়ায় ফিশারিঘাটের পাঁচ শতাধিক ইলিশ ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের কানাইয়ার বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, লোকজন ভিড় করে মাছ কিনছেন। কিন্তু বাজারে ইলিশ পাওয়া গেল মাত্র ৭টি। ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের এসব ইলিশের প্রতিকেজির দাম হাঁকা হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা, যা ১০ দিন আগেও ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ছিল বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
মৎস্য ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, ‘সাগরে ইলিশ নেই, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ২২ দিন সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ আহরণ বন্ধ থাকবে। বন্ধের আগের কয়েক দিনে ইলিশ ধরা না পড়লে লাখো জেলে বিপাকে পড়বেন।
ভরা মৌসুমেও সাগরে ইলিশের খরা পরিস্থিতির কারণ জানতে চাইলে সমুদ্রবিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, বৃষ্টি হয়নি অনেক দিন। পানির লবণাক্ততাও বেড়েছে অনেক। এ কারণে ইলিশ গভীর সাগরে চলে গেছে। টানা কয়েক দিন ভারী বৃষ্টি হলে গভীর সাগর থেকে দল বেঁধে ইলিশ আবার উপকূলের দিকে ছুটে আসবে। ভরা মৌসুমে ইলিশ ধরা পড়ছে না কেন, এ বিষয়ে গবেষণা দরকার।