সুপ্রভাত ডেস্ক »
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী এপ্রিলে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথা বলেছেন। ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত নতুন সরকারে তার থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
ওই সাংবাদিক প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন, নির্বাচন হয়ে গেলে নির্বাচিত সরকার যখন দায়িত্ব নেবে, সেখানে আপনার অংশ হওয়ার কোনো ইচ্ছে আছে কি না।
জবাবে দুই হাত নেড়ে হাস্যোজ্জ্বল ড. ইউনূস বলতে থাকেন, নো ওয়ে, নো ওয়ে (একদমই না)। আমার মনে হয় আমাদের উপদেষ্টা পরিষদের কোনো সদস্যই এমনটা করবেন না। আমাদের দায়িত্ব হলো, ট্রানজিশনটা (গণতান্ত্রিক রূপান্তর) ভালোভাবে সম্পন্ন করা এবং জনগণকে খুশি করা। … নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। আমরা নির্বাচনটা যথাযথভাবে করা নিশ্চিত করতে চাই। এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্ববহ বিষয়। যদি নির্বাচন ভুল হয়, তাহলে এই বিষয়টার আর সমাধান হবে না…।
ড. ইউনূস বলেন, ১৭ বছর পর আমরা সত্যিকারের একটি নির্বাচন করতে যাচ্ছি; যা আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, ঘোষিত সময়টি (আগামী বছরের এপ্রিল) নির্বাচনের সঠিক সময়। ভোটের জন্য প্রস্তুত দেশের জনগণ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভোট দিতে মুখিয়ে আছে দেশের তরুণ ভোটাররা। যারা গত ১৭ বছর ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
নতুন বাংলাদেশ তৈরির জন্য সংস্কার কমিশন তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কমিশন তৈরি করেছি। আমরা তাদের সুপারিশের দিকে তাকিয়ে আছি। আমাদের কাজ হলো সব দলের ঐকমত্য তৈরি করা।
তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই মাসের জন্য অপেক্ষা করছি। এই সনদটি জাতির সামনে জুলাই মাসের সনদ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।’
সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগে পাসপোর্টসহ বিভিন্ন সরকারি সেবা পেতে ‘মাধ্যম’ প্রয়োজন হতো। যার মাধ্যমে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হতো। এখন সরকারি বিভিন্ন সেবা অনলাইনের মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছে, যাতে সবাই সহজেই সেবা নিতে পারেন।
এ সময় নারীদের অধিকার নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।
চ্যাথাম হাউসে রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সে এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশে হাজারো মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে কিন্তু শেখ হাসিনা বা তার দল এখনো সেই হত্যার জন্য কোনো দুঃখ প্রকাশ করেনি। তার ওপর ভারত থেকে প্রতিনিয়ত মিথ্যা ও ভুল সংবাদ প্রচার অব্যাহত রয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, দেশকে আমরা নতুন করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এটা অনেক কঠিন একটি কাজ। আমাদের ব্যাংকিং সিস্টেম কলাপস করেছিলো। এখন ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বেড়েছে। আগের থেকে অবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে। আইএম্এফ-বিশ্বব্যাংক আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আইওএম খুব পজিটিভ রোল নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের সামনে দেশ গড়ার এখন একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। আমরা সবাই একযোগে কাজ করলে দেশ এগিয়ে যাবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ড. ইউনূস বলেন, সাত বছর আগে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাদের বয়স পাঁচ মাস থেকে শুরু করে ৫ বা ৭ বছর বয়সীও ছিল, তারা সবাই এখন যুবক বা কিশোর। মার্কিন সরকার বিভিন্ন কর্মসূচীতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ায় এখন তাদের ভরনপোষণ কারা দেবে? তাদের তো থাকার নির্দিষ্ট সময়ও নেই। বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। আমরা তাদের ফিরিয়ে নিতে কাজ করছি। এ নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা করছি। জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলনেরও আয়োজন চলছে।