সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক :
মাঝারি রান তাড়ায় অনায়াস জয়ের পথে ছিল অস্ট্রেলিয়া। চ্যালেঞ্জিং উইকেটেও সাবলীল ব্যাটিংয়ে অ্যারন ফিঞ্চ ও মার্নাস লাবুশেন অনেকটাই মুঠোয় নিয়ে এসেছিলেন ম্যাচ। কিন্তু তাদের শতরানের জুটি ভাঙার পর ঘুরে দাঁড়ানোর চমৎকার এক গল্প লিখল ইংল্যান্ড। বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব ও পেসারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের মিশেলে নাটকীয় জয়ে সিরিজে সমতা টানল ওয়েন মর্গ্যানের দল। ম্যানচেস্টারে রোববার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২৪ রানে জিতেছে ইংল্যান্ড। তিন ম্যাচ সিরিজে এখন ১-১ সমতা। নবম উইকেটে আদিল রশিদ ও টম কারানের ৭৬ রানের মহামূল্য জুটি ইংল্যান্ডকে এনে দিয়েছিল ২৩১ রানের পুঁজি। খবর বিডিনিউজের।
২৯ রানে দুই ওপেনারকে হারানো ইংল্যান্ড প্রতিরোধ গড়ে জো রুট ও মর্গ্যানের ব্যাটে। শুরুর কঠিন সময়ের পর জমে উঠেছিল তাদের জুটি। বাড়তে শুরু করেছিল রানের গতি।
আক্রমণে এসেই ৬১ রানের জুটি ভাঙেন অ্যাডাম জাম্পা। ৩৯ রান করে সিøপে ক্যাচ দেন রুট। আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ভোগানো লেগ স্পিনার পরে বিদায় করেন ৪২ রান করা মর্গ্যানকেও। জ্যাম্পার দুই উইকেটের মাঝে জস বাটলারকে ফেরান প্যাট কামিন্স।
আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান স্যাম বিলিংস যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। দ্রুত ফিরেন স্যাম কারানও। থিতু হয়ে বিদায় নেন ক্রিস ওকস। রুটের বিদায় দিয়ে যে ধসের শুরু, তাতে ৫৯ রানের মধ্যে হারিয়ে ফেলে তারা ৬ উইকেট। দুইশ তখন মনে হচ্ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে।
১৪৯ রানে ৮ উইকেট হারানো দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন টম কারান ও রশিদ। পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন টম, শেষের দিকে চড়াও হন রশিদও। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড পায় ইনিংসে সেরা জুটি, ৫৭ বলে ৭৬ রান।
৫ চারে ৩৭ রান করে শেষ ওভারে ফিরে যান টম। তিন চার ও এক ছক্কায় ২৬ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত থাকেন রশিদ। শেষ ১০ ওভারে ৮২ রান পেয়ে যায় ইংল্যান্ড।
ব্যাটিংয়ে বাউন্ডারি দিয়ে ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ করা আর্চার বল হাতে আঘাত হানেন শুরুতেই। ৯১ মাইল গতির দারুণ এক ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড করে ফেরান ডেভিড ওয়ার্নারকে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এ নিয়ে সাতবার আর্চারের বলে আউট হলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। চলতি সফরে দুই টি-টোয়েন্টির পর দুই ওয়ানডে, টানা চার ইনিংসে আর্চারের শিকার ওয়ার্নার।
আর্চারের নিখুঁত বাউন্সার ঠিকমতো খেলতে না পেরে কিপারকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনে নামা মার্কাস স্টয়নিস।
ফিঞ্চ ও লাবুশেনের ব্যাটে শুরুর ধাক্কা সামাল দেয় অস্ট্রেলিয়া। ওকস-আর্চার আক্রমণ থেকে সরে যাওয়ার পর রানের গতি বাড়ান দুই ব্যাটসম্যান। তাদের শতরানের জুটি অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে নেন জয়ের পথে।
লেগ স্পিনার রশিদকে শুরু থেকেই আক্রমণ করে থিতু হতে দেননি এই দুই ব্যাটসম্যান। দুই ভাই টম ও স্যাম কারানও পাচ্ছিলেন না জুটি ভাঙার পথ। মর্গ্যান তখন আক্রমণে ফেরান নতুন বলের দুই বোলারকে, তাতে পাল্টে যায় চিত্র। ওকস-আর্চারের আঘাতে ২ উইকেটে ১৪৪ রান থেকে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর হয়ে যান ৬ উইকেটে ১৪৭!
ওকসের বলে এলবিডব্লিউর সফল রিভিউ নিয়ে লাবুশেনকে (৫৯ বলে ৪৮) ফিরিয়ে ১০৭ রানের জুটি ভাঙে ইংল্যান্ড। আর্চারের নিচু হয়ে যাওয়া এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে যান মিচেল মার্শ।
এরপর ওকসের জোড়া আঘাত ম্যাচ ঘুরিয়ে নেয় ইংল্যান্ডের দিকে। নিজের পরপর দুই ওভারে বোল্ড করে দেন তিনি ফিঞ্চ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে।
১০৫ বলে ফিঞ্চের ৭৩ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস গড়া ৮ চার ও এক ছক্কায়। আগের ম্যাচের নায়ক ম্যাক্সওয়েল এবার করেছেন কেবল ১ রান। দুজনই বোল্ড হয়েছেন ভুল লাইনে শট খেলে।
একটু ঝুঁকি নিয়ে আগেভাগেই আর্চার-ওকসের কোটা শেষ করিয়ে দেন ইংলিশ অধিনায়ক। পরে দলের প্রয়োজনের সময় দারুণভাবে নিজেকে মেলে ধরেন স্যাম কারান। পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দেন কামিন্স ও স্টার্ককে।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার আশা বেঁচে ছিল অ্যালেক্স কেয়ারির ব্যাটে। জশ হেইজেলডকে নিয়ে শেষ জুটিতে ৩১ রান তুলে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু এই কিপার-ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েই ম্যাচের ইতি টানেন রশিদ।
আগামীকাল বুধবার একই ভেন্যুতে হবে সিরিজ নির্ধারণী শেষ ওয়ানডে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৩১/৯ (রয় ২১, বেয়ারস্টো ০, রুট ৩৯, মর্গ্যান ৪২, বাটলার ৩, বিলিংস ৮, ওকস ২৬, স্যাম কারান ১, টম কারান ৩৭, রশিদ ৩৫*, আর্চার ৬*; স্টার্ক ১০-১-৩৮-২, হেইজেলউড ১০-২-২৭-১, কামিন্স ১০-৩-৫৬-১, মার্শ ৮-১-৪৯-১, স্টয়নিস ২-০-২০-০, জ্যাম্পা ১০-০-৩৬-৩)
অস্ট্রেলিয়া: ৪৮.৩ ওভারে ২০৭ (ওয়ার্নার ৬, ফিঞ্চ ৭৩, স্টয়নিস ৯, লাবুশেন ৪৮, মার্শ ১, কেয়ারি ৩৬, ম্যাক্সওয়েল ১, কামিন্স ১১, স্টার্ক ০, জ্যাম্পা ২, হেইজেলউড ৮*; ওকস ১০-১-৩২-৩, আর্চার ১০-২-৩৪-৩, টম কারান ১০-০-২৮-০, রশিদ ৯.৪-০-৬৮-১, স্যাম কারান ৯-০-৩৫-৩)
ফল: ইংল্যান্ড ২৪ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ: জফ্রা আর্চার
খেলা