রাজু কুমার দে, মিরসরাই
২০১৮ সালের ২১ মার্চ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সাথে বিজিএমইএর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলেও বেজা বিজিএমইএ গামের্ন্টস পল্লী এলাকায় দীর্ঘ দিন উন্নয়ন কাজ করেনি। অবশেষে গত ২১ জুলাই উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করা হয়।
চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। উল্লেখ্য, এটি পুরোপুরি চালু হলে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের।
বেজা সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের টু-এ এর আওতাধীন এক হাজার একর এবং টু বি এর আওতাধীন গার্মেন্টস পল্লীর ৫০০ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই দুই এরিয়ায় ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয়েছে ইন্টারনাল সড়ক ও ড্রেনেজ নির্মাণের কাজ। শুধু তাই নয় আগামী ৬ মাসের মধ্যে এসব এলাকায় গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ দেবে বেজা। পর্যায়ক্রমে ইটিপিসহ অন্যান্য ইউটিলিটি সেবা নিশ্চিত করা হবে। উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় শীঘ্রই সেখানে কারখানা নির্মাণ করতে পারবে বলে আশা করছে বিনিয়োগকারীরা। আগামী ২ বছরের মধ্যে শেষ হবে প্রকল্পের কাজ। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরের টু এ এরিয়ায় রয়েছে ৯৪০ একর জায়গা। ওই এলাকায় বরাদ্দযোগ্য ৭০০ একর জায়গার মধ্যে প্রায় সবগুলো জায়গা বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া টু বি এরিয়ায় ৫০০ একর জায়গায় গড়ে উঠবে বিজিএমইএ গার্মেন্টস ভিলেজ। সেখানে প্রায় ৩২১ একর জায়গা গার্মেন্টস কারখানা নির্মানের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে। বাকি জমিতে সবুজায়ন, ইন্টারনাল সড়ক, ড্রেন, ইটিপি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানিসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার অবকাঠামো নির্মিত হবে। গার্মেন্টস পল্লীর উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করছে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার সলিমিটেড-এনডিই এবং টু এ এরিয়ায় উন্নয়ন কাজ করছে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন। প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই দুই প্রকল্পে ২৩ কিলোমিটার ২ লেনের রাস্তা ও ২৯ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হবে।
বিজিএমই সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে গার্মেন্টস পল্লী গড়তে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সাথে বিজিএমইএর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় ২০১৮ সালের ২১ মার্চ। ৪৯ জন শিল্প উদ্যোক্তা ২৯১ একর জমির অনুকূলে বেজাকে ২০৯ কোটি টাকাও প্রদান করে। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ১৫ মার্চ ৪১টি কারখানা মালিকের সাথে বেজার জমি ইজারা চুক্তি হয়। গত ২১ জুলাই উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। বিজিএমই এর গামের্ন্টস পল্লীতে মোট বিনিযোগ হবে ১১শ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি চালু হলে প্রায় ৪ লাখ নারী পুরুষের কর্মসংস্থান হবে।
সরেজমিনে বিজিএমইএ গামের্ন্টস পল্লী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ড্রেন ও সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করেছে বেজা। সড়ক নির্মাণের জন্য এস্কেভেটর দিয়ে মাটি ভরাট করা হচ্ছে। ড্রেনেস ও সড়ক নির্মাণের পর উদ্যোক্তারা কারখানা নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবেন। বিজিএমই গামের্ন্টস পল্লী এরিয়ায় উদ্যোক্তাদের জন্য ৩৩ একর, ৩০ একর, ২০ একর, ১০ একর, ৮ একর, ৬ একর, ৭ দশমিক ৫ একর, ৩ একর ৪ একর, ২ একর এবং সর্বনিম্ম ১ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বিজিএমইএ গার্মেন্টস পল্লীতে কারখানা নির্মানের জন্য ৪০ জন বিনিয়োগকারীকে ২৩৭ একর জায়গাও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র পরিচালক ও ক্লিপটন গ্রুপের সিইও এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ইন্টারনাল সড়ক না থাকায় গার্মেন্টস ভিলেজে এত দিন কারখানা নির্মানের কাজ শুরু করা যায়নি। যেহেতু সেখানে সড়ক, ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা কারখানা নির্মানের কাজ শুরু করতে পারবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক বলেন, শিল্পনগরের বিজিএমইএ গামের্ন্টস পল্লীসহ দুটি জোনে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। তাই বিনিয়োগকারীরা চাইলে এখনই কারখানা নির্মানের কাজ শুরু করতে পারে।