মোহাম্মদ নাজিম :
করোনা সংকট সময়ে হঠাৎ করেই আলোচনায় এসেছে স্থগিত হওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন। গত শনিবার (৪ জুলাই) দুটি সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ঘোষিত সিদ্ধান্তে চসিক নির্বাচনের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি ইসির বক্তব্যে।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আর স্থানীয় সরকারের অধীনে সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনায় আসছে ঘুরেফিরে। তবে পরিবেশ, পরিস্থিতি বিবেচনায় নির্বাচনে বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের মাঝে নতুন করে তফসিল ঘোষণা, মেয়াদোত্তীর্ণ মেয়রের দায়িত্বের সময়কাল বৃদ্ধি কিংবা নতুন প্রশাসক নিয়োগের বিষয়ে সুষ্পষ্ট নির্দেনা চেয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার অধীনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। অন্য নির্বাচনের বিষয়ে ইসির সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও, সিটি নির্বাচনের বিষয়ে স্থানীয় সরকারেরর নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়।
স্থানীয় সরকার আইন (সিটি করপোরেশন) ২০০৯-এর ৩৮(১)’র ক ধারায় বলা হয়েছে, করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আর আগামী ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বর্তমান পরিষদের মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই আইনের ৬ ধারায় আরো বলা হয়েছে, প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর নির্ধারণ করা হয়। সে হিসেবে ২৯ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির আশঙ্কায় নির্বাচন স্থগিত করে কমিশন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ সুপ্রভাতকে বলেন, বর্তমান পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে ঝুঁকি রয়েছে। এই মুহূর্তে সরকারের ইচ্ছার উপর সবকিছু বিবেচনা করছে। প্রয়োজনে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে পারে। মহামারির এমন সময়ে জনগণের জীবন রক্ষার চেয়ে বড় কোনো বিষয় হতে পারে না।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আর নতুন প্রশাসক বিষয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, মানুষের প্রয়োজনে আইন, সরকার চাইলে আইনের বিধিবিধান পরিবর্তন করতে পারেন। চাইলে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারেন। বর্তমান যারা দায়িত্বে আছেন তারাও কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।
এবিষয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. হাসানুজ্জামান সুপ্রভাতকে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি। আগের সিদ্ধান্ত (স্থগিত নির্বাচন) বহাল রয়েছে। সরকারের নির্দেশনা পেলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।
ইসি সচিব যা বললেন
এদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. আলগমীর বলেছেন, করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন করা হবে না।
রোববার বিকেলে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে এ কথা বলেন তিনি।
ইসি সচিব বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জন্য ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় আছে। এরপরও নব্বই দিন সময় নেওয়া যাবে। তাই করোনা মহামারি কাটার আগে এ নির্বাচন করার কোনো পরিকল্পনা নেই।
মো. আলমগীর আরও বলেন, শুধু চট্টগ্রাম সিটি নয়, স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনগুলোও করোনা মহামারি কেটে গেলে ভোট করা হবে।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করেছিল ইসি। এ সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বিধান রয়েছে।
আগামী ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটির ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে ২১ মার্চ ভোট স্থগিত করে ইসি। ভোটে বৈধ ছয় প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপির শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন, পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম। এছাড়া কাউন্সিলর পদে ২ শতাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন।
পরবর্তীতে যখনই নির্বাচন হবে, এই প্রার্থীরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
উল্লেখ্য যে, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করে ইসি। এ সিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট। বর্তমান মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন।
টপ নিউজ