আলোচনায় যারা

চট্টগ্রাম ৮ আসনে উপনির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পর এরমধ্যেই শুরু হয়েছে উপনির্বাচন নিয়ে আলোচনা। নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন অনেকেই। তবে তিনজনের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। সকলের প্রত্যাশা দলীয় মনোনয়নের।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চান্দগাঁও-পাঁচলাইশসহ নগরীর পাঁচটি ওয়ার্ড এবং বোয়ালখালী উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন নিয়ে চট্টগ্রাম-৮ আসন গঠিত। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর পর সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদলের মৃত্যুতে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ। কিন্তু তিনিও দায়িত্বরত অবস্থায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। ফলে নিয়ম অনুযায়ী শূন্য আসনে আবারও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়তে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে রয়েছেন- চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়ব। এছাড়া তৃণমূলের গুঞ্জনে রয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আওয়ামী লীগ নেতা এস এম আবুল কালাম, সাবেক মঈন উদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান এবং প্রয়াত সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমদের স্ত্রী শিরিন আহমদের নামও।
নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমদের সহধর্মিণী শিরিন আহমদ সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমার স্বামীর অবর্তমানে চট্টগ্রাম-৮ আসনের অবশিষ্ট উন্নয়নমুখী কাজ করতে আমি নির্বাচনে আসার ইচ্ছে পোষণ করছি। যদি নেত্রী আমাকে নির্দেশ দেয়, আমি নির্বাচন করবো। নেত্রী আমাকে যা বলবে আমি তা মেনে নিতে রাজি।’
একইভাবে সাবেক সাংসদ মঈন উদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি গতবার উপনির্বাচনেও আমার আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছিলাম। তবে দল থেকে তখন মোছলেম উদ্দিনকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপরও জনগণের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। এখনও জনগণের পাশে আছি। যদি জনগণ আমাকে চায় এবং নেত্রী যদি আওয়ামী লীগ থেকে আমাকে সেই সুযোগ দেয়, আমি মানুষের সেবায় অবশ্যই কাজ করবো।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এস এম আবুল কালাম সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আমাকে যদি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, আমি নির্বাচনে আসতে রাজি। অন্যকোন দলের হয়ে কাজ করতে চাই না।’
একই সুরে ব্যবসায়ী এস এম আবু তৈয়ব সুপ্রভাতকে বলেন, ‘সাংসদ মোছলেম উদ্দিন মারা যাওয়ার পর, এলাকার বিভিন্নজন আমাকে বলেছেন যেনো এলাকার জন্য কাজ করি। আমাকে দিয়ে যদি এলাকার কোন উন্নয়নমুখী কাজ হয়, আমি সেই কাজ করতে রাজি। যদি আওয়ামী লীগ থেকে মনে করে আমি সেই কাজের উপযুক্ত, তাহলে আমি দায়িত্ব নিতে চাই। যদি আওয়ামী লীগের অন্য কোনো নেতাকে সেই সুযোগ দেয়া হয়, তবুও তার হয়ে কাজ করবো।’
সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, ‘যেহেতু সাংবিধানিক নিয়ম আমরা কেউ ভাঙতে পারি না। আমরা কেউ আইন বা রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে নই। যেহেতু সাংবিধানিক ধারায় নির্বাচন করতে হবে। মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারে। তবে এখানে নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’
এই আসনে তার দায়িত্ববোধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমার জন্মস্থান, কর্মস্থল ও বাসস্থান এ আসনে, তাই এ এলাকার মাটি ও মানুষের প্রতি আমার টান রয়েছে। এলাকার মানুষের সেবা করা আমার দায়িত্ব বলে মনে করি। তবে আমাকে মাননীয় নেত্রী ১০ বছর ধরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)তে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কি হতে পারে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন সরাসরি উপনির্বাচনে আসার ইচ্ছে প্রকাশ না করলেও এ আসনে সাংসদ হতে চাওয়ার গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এ নিয়ে তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘আসলে আমি নির্বাচনে আসার সরাসরি প্রত্যাশা করছি না। হ্যাঁ বা না এখনো বলতে পারছি না। তবে বিষয়টি এখন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাকে বাধা দিচ্ছে। কারণ এক আসনে দুই নেতাকে হারিয়ে হৃদয়ে গভীরভাবে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমি নেত্রীর সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত বলে মনে করছি। যেহেতু আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসছি। মহানগর আওয়ামী লীগের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাকে রাখা হয়েছে। তাছাড়া রাজনীতির বাইরেও আমার আরেকটি জগত রয়েছে। যা ক্রীড়াজগত। এক্ষেত্রে আমার একটি অবস্থান আছে। যেহেতু সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হবে। দল যদি আমাকে উপযুক্ত মনে করে বা আমাকে ওই আসনের দায়িত্ব নিতে বলে, তাহলে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।’