নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে জীবনযাপনের সংকটে পড়েছেন গরিব, নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। সাধারণ মানুষের অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য তালিকায় আছে চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, আলু, এর মধ্যে ডাল ছাড়া অন্যসব পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মোটা চাল কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার বেশি। এ দাম ৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ২ মাসে ভোজ্য তেলের দামও বেড়েছে। পেঁয়াজ কেজি ১০০ থেকে ১১০টাকা। আলুর দাম সম্ভবত সর্বকালের রেকর্ড ভেঙেছে।
কয়েক সপ্তাহ আগেও ছিলো ২৫-৩০ টাকা। এখন কেজি ৫৫-৬০ টাকায়। অথচ চাহিদার তুলনায় আলুর উৎপাদন হয়েছে বেশি। সরকার বলছে আলুর মজুত যথেষ্ট। সরকার থেকে আলুর দাম বেঁধে দিলেও বাজারে এর কোন প্রভাব পড়েনি। অন্যদিকে সরকার বলছে চালের মজুত মোটামুটি পর্যাপ্ত। ডিসেম্বরে আমন ধান উঠলে চালের দাম কমে আসার কথা বলছে সরকার। পেঁয়াজের দাম এখনো একশত টাকার উপরে। আদা, রসুনের দাম কমেনি। সবজির বাজারে আগুন, ৭০/৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। কাঁচা মরিচ কেজি ২৫০-৩০০ টাকা। প্রতিদিন নানা আইটেমের মূল্য বাড়তে থাকলেও সরকারি প্রশাসনের এ ক্ষেত্রে কোন প্রতিকারমূলক ভূমিকা নেই। মানুষ নানা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। সরকারও এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না। আর জনগণ অসহায়ের মতো ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়েছে তাদের বর্তমান আর ভবিষ্যৎ।
করোনাকালে মানুষের আয় কমেছে, নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে আরো দেড় কোটি মানুষ। বিবিএস প্রতিনিয়ত পরিসংখ্যানে মানুষের জীবনযাপনের নানা তথ্য তুলে ধরছে। দরিদ্র, নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা করোনার অভিঘাতে দিশেহারা; ভোগ ব্যয় কিংবা বিনোদন চিন্তার বাইরে, কোনোরকমে সন্তানÑপরিজন নিয়ে টিকে থাকার লড়াই করছে। পুষ্টির কথা বাদই থাকলো। মোটা চালের কেজি যদি ৫০ টাকায় চলে যায় তবে গরিবÑনি¤œআয়ের মানুষ কোথায় যাবে? চালকল মালিকরা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। চালের মোটামুটি সন্তোষজনক মজুত আছে, সরবরাহ ঠিকমতো থাকার পরও দাম বাড়বে কেন? আর দাম বাড়ার পর সেটি আর সহজে নামে না যতই উৎপাদন ভাল কিংবা সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি থাকুক। চাল উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ তবুও দাম আকাশছোঁয়া। আর ক্রমাগত এই মূল্যবৃদ্ধি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাকেও ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত যাচাই, সরবরাহ অব্যাহত ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে দ্রুত আমদানির পদক্ষেপ নেওয়া। বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ এলেও এর দাম আগের জায়গায় আসেনি। চাষিরা ন্যায্য দাম পায় না, অপরদিকে আড়তদার, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য হাতিয়ে নিচ্ছে। ভোক্তারা বাজারে গিয়ে নাকাল হয়।
সরকারের উচিত চালের মূল্য বাড়ায় ‘ওপেন মার্কেট সেল’ ও গরিব মানুষদের স্বল্পমূল্যে খাদ্য যোগান দেওয়ার কার্যক্রম বাড়িয়ে দেয়া। সেই সাথে নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেখা যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি নানা পণ্যের মূল্য ক্রমাগত বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকার থেকে মজুত, সরবরাহ, আমদানি নিয়ে পর্যাপ্ত ব্যাখ্যা জনগণকে জানানো উচিত।
মতামত সম্পাদকীয়




















































