চলমান লকডাউন আরো ১ সপ্তাহ বাড়ছে আগের একই বিধিনিষেধের আওতায়। কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অনুসারে সরকার ২২ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মর্মে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ঈদের আগে বিধিনিষেধ শিথিলের ভাবনাও সরকারের রয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ২৫ এপ্রিল রোববার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখা হতে পারে, এমন আভাসও মিলেছে নানাসূত্রে।
উল্লেখ্য, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আঘাতে সংক্রমণ ও মৃত্যু রেকর্ড করতে থাকায় সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ৫ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের জন্য গণপরিবহণ চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করলেও তা তেমন ফলপ্রসূ না হওয়ায় ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল ‘কঠোর লকডাউন’-এর ঘোষণা আসে। করোনা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে কারিগারি পরামর্শক কমিটি ১৪ দিনের লকডাউনের সুপারিশ করেন। গত সোমবার করোনায় মৃত্যু হয়েছে সর্বোচ্চ ১১২ জন। লকডাউনের সাফল্য নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও কেনাকাটায় দূরত্ব বজায় রাখা অপরিহার্য। সামনে ঈদের সময় দোকানপাট ও গণপরিবহনে ভিড়ের পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে অর্থাৎ সচেতনভাবে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হতে পারে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির মধ্যে সমন্বয়, কমিউনিটি সম্পৃক্ততা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে।
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় লকডাউন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন পেশায় ক্ষতিগ্রস্তদের দ্বিতীয় দফায় নগদ সহায়তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্যোগে বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ১ লাখ কৃষক পাঁচ হাজার টাকা এবং শ্রমজীবী ৩৫ লাখ মানুষ দুই হাজার পাঁচশত টাকা করে পাবেন। দিনমজুর, গৃহকর্মী, নির্মাণশ্রমিক, পরিবহণ শ্রমিক, রিকশা ও ভ্যানচালকসহ দরিদ্র ও নি¤œআয়ের মানুষ এই নগদ সহায়তা পাবেন মর্মে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে উপকারভোগীদের হাতে এই সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, করোনার প্রথম লকডাউনের সময়, যা দীর্ঘ হয়েছিল, ওই সময়েও প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র ও অসহায়দের অনুরূপ নগদ সহায়তা দিয়েছেন। উপকারভোগীদের সংখ্যাও ছিল প্রায় ৩৫ লাখ ছিল।
‘লকডাউন’-এর সময় বাড়ায় দরিদ্রদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই নগদ সহায়তা কার্যক্রম প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিশ্চয়। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, অন্যান্য সহায়ক কর্মসূচি যথা টেস্ট রিলিফ (টিআর), জেনারেল রিলিফ (জিআর), ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ), ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি)- নিয়মিত চলবে। এসব কর্মসূচি গ্রামীণ দরিদ্রদের উপকারে আসবে। শহরাঞ্চলে কমমূল্যে টিসিবি নিত্যপণ্য সরবরাহ করছে। সরকারের এসব জনবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়নে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা কিংবা দুর্নীতির অভিযোগ যাতে না ওঠে সে ব্যাপারে প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে। লকডাউন যদি আরো বাড়ে, সেরূপ পরিস্থিতিতে দরিদ্র, নি¤œআয় ও মধ্যবিত্ত জনগণের সহায়তার ব্যাপারে এখন থেকেই সরকারকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
করোনার এ সময়ে স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি, জনগণের স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ, টিকা গ্রহণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। করোনা পরিস্থিতির অবসান কবে হবে, তা অনিশ্চিত। সুতরাং টিকাদান কর্মসূচি কোনোভাবেই যাতে ব্যাহত না হয়, সে ব্যাপারে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।